রবিবার সন্ধ্যায় বর্ধমান (Bardhaman) রেলস্টেশনে হঠাৎ এক মুহূর্তের বিশৃঙ্খলায় থমকে যায় শতাধিক মানুষের চলাচল। ব্যস্ত সময়ে প্ল্যাটফর্মে এমন আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয় যে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই চিৎকার, ধাক্কাধাক্কি আর হুড়োহুড়িতে মিশে যায় রেলস্টেশনের কোলাহল। আর সেই বিশৃঙ্খলার মধ্যেই ঘটে যায় এক মর্মান্তিক পদপিষ্টের ঘটনা।
কীভাবে ঘটল দুর্ঘটনা
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, প্ল্যাটফর্ম নম্বর ৪ ও ৫-এর মাঝের ফুটব্রিজে সন্ধ্যার সেই সময়ে ট্রেন ধরার তাড়ায় ভিড় জমে ছিল প্রবল। ঠিক তখনই মাইকিংয়ের মাধ্যমে ট্রেন ছাড়ার ঘোষণা হতেই সবাই একসঙ্গে নামতে শুরু করেন সিঁড়ি দিয়ে। অতিরিক্ত ভিড়ে চাপ পড়ে লোহার সিঁড়িতে, কয়েকজনের পা পিছলে যেতেই শুরু হয় হুড়োহুড়ি ও ধাক্কাধাক্কি। মুহূর্তের মধ্যেই কয়েকজন যাত্রী পড়ে যান সিঁড়িতে, আর তাতেই তৈরি হয় পদপিষ্টের বিভীষিকা।
তথ্য ও প্রশাসনিক বিভ্রান্তি
দুর্ঘটনায় বহু যাত্রী আহত হয়েছেন। এর মধ্যে অন্তত ছয়জন এখনও বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন, যাদের কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। কিন্তু আহতদের প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে প্রশাসনের মধ্যেই দেখা দিয়েছে বিভ্রান্তি। রাত ১১টার কিছু আগে হাওড়া ডিভিশনের ডিআরএম বিশাল কাপুর জানান, হাসপাতালে ভর্তি ৮ জন—যার মধ্যে ৫ জন মহিলা ও তিনজনের অবস্থা গুরুতর। অন্যদিকে, পূর্ব রেলের জনসংযোগ আধিকারিক দীপ্তিময় দত্ত দাবি করেন, ভর্তি মাত্র ৩ জন। এই পরস্পরবিরোধী তথ্য স্পষ্ট করে দিয়েছে প্রশাসনিক সমন্বয়ের ঘাটতি।
নিরাপত্তা নিয়ে ক্ষোভ ও অনিশ্চয়তা
স্থানীয় নিয়মিত যাত্রীদের মত, এই বিশৃঙ্খলা নতুন কিছু নয়। বহু বছর ধরে স্টেশনের ওই অংশে ভিড় নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছে রেল কর্তৃপক্ষ। তাদের অভিযোগ, বারবার সতর্ক করার পরও যথেষ্ট ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। দুর্ঘটনার পর সোমবার সকাল থেকে জিআরপি ও আরপিএফ মোতায়েন বাড়ানো হলেও, অনেকে মনে করছেন এটি সাময়িক ব্যবস্থা মাত্র। এক যাত্রীর কথায়, “দুর্ঘটনার পর কয়েকদিন কড়া নিয়ম চলে, তারপর সব আগের মতো হয়ে যায়।”
বর্ধমান রেলস্টেশন এখন একটাই প্রশ্নের মুখে—এই ভয়াবহ পদপিষ্টের ঘটনার পর সত্যিই কি বদলাবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা, নাকি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ফের হারিয়ে যাবে স্মৃতি ও সতর্কতা?