পড়াশোনা থেকে শুরু করে বহির্জগতের বিভিন্ন কাজের ক্ষেত্রে সমগ্র ভারতের মেয়েরা বরাবরই পিছিয়ে থেকেছে। আর তাই সমগ্র দেশের মেয়েদের শিক্ষাক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক সাহায্য থেকে শুরু করে স্বাবলম্বী করে তোলার জন্য বিশেষত মেয়েদের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার তরফে নানা ধরনের প্রকল্প স্কিম এবং স্কলেরশিপ চালু করা হয়েছে। আর এই সমস্ত স্কলারশিপ প্রকল্প এবং স্কিমের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় একটি যোজনা হল সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা। ভারতের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কন্যা সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে এই সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা কার্যকর করা হয়েছিল। ভারতে বসবাসকারী প্রতিটি কন্যা সন্তান যেন উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পায় এবং ভবিষ্যতে নিজে স্বাবলম্বী হতে পারে তা নিশ্চিত করাই কেন্দ্রীয় সরকারের সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনার অন্যতম উদ্দেশ্য। আর এই নতুন বছরে কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন উদ্যোগের কারণে পুনরায় নাগরিকদের মধ্যে সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা নিয়ে নানা ধরনের চর্চা শুরু হয়েছে। ফলত ভারতীয় জনগণের মধ্যে এই যোজনার নিয়ে বারংবার নানা ধরনের প্রশ্ন উঠেছে রাজ্যের সাধারণ মানুষের মধ্যে।
সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা কি?
কন্যা সন্তানের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে কার্যকরী একটি যোজনা হল সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা। কন্যা সন্তানের জন্মের পরই এই যোজনার আওতায় অ্যাকাউন্ট ওপেন করা যায়। নাগরিকরা তাদের বাড়ির নিকটবর্তী যেকোনো ব্যাংক কিংবা পোস্ট অফিসের অধীনে সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা আওতায় একাউন্ট ওপেন করতে পারবেন। পরবর্তীতে তাদের সামর্থ্য অনুসারে এই একাউন্টে কিছু পরিমাণ টাকা সঞ্চয় মাধ্যমে উক্ত পিতা অথবা মাতা তার কন্যা সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য একটি বড় আমানতের টাকার অংক সঞ্চয় করতে পারবেন।
কারা সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা আওতায় আবেদন জানাতে পারবেন?
১. কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে যেকোনো ভারতীয় নাগরিকই তার কন্যা সন্তানের জন্য সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা আওতায় একাউন্ট খুলতে পারবেন। তবে একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুটি কন্যা সন্তানের জন্য সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা আওতায় একাউন্ট খুলতে পারবেন। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে এই নিয়মে ছাড় দেওয়া হয়ে থাকে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, প্রথম কন্যা সন্তানের জন্মের পর যদি দ্বিতীয়বার জমজ সন্তানের জন্ম হয় তবে উক্ত নাগরিক তার তিনটি কন্যা সন্তানের জন্যই সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনার আওতায় একাউন্ট খোলার সুবিধা পাবেন।
২. কন্যা সন্তানের জন্মের পর থেকে ১০ বছর বয়সী কন্যা সন্তানের জন্য সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনার আওতায় একাউন্ট খোলা সম্ভব। ১০ বছরের বেশি বয়সী কন্যা সন্তানের জন্য সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনার আওতায় একাউন্ট খোলা সম্ভব নয়। তবে আপনি যদি আপনার কন্যা সন্তানের ১ বছর বয়সে এই যোজনার আওতায় অ্যাকাউন্ট ওপেন করে তবে সর্বাধিক টাকা ফেরত পেতে পারবেন।
আরও পড়ুন:- ব্যাঙ্ক CSP এর জন্য আবেদন করবেন কিভাবে? জেনে নিন সহজ পদ্ধতি।
সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনার আওতায় কি কি সুবিধা পাওয়া যায়?
কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে জারি করা তথ্য অনুসারে জানা গিয়েছে যে, সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা আওতায় ৮% হারে সুদ প্রদান করা হয়ে থাকে। একজন পিতা অথবা মাতা তার কন্যা সন্তানের জন্য এই যোজনার অধীনে প্রত্যেক বছর ন্যূনতম ২৫০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করার সুযোগ পাবেন। আপনার কন্যা সন্তান পরবর্তীতে কত টাকা ফেরত পাবে তা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে আপনি প্রতি বছরে কত টাকা করে বিনিয়োগ করছেন তার উপর। তবে এই যোজনা থেকে আপনার কন্যা সন্তান অন্ততপক্ষে ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ফেরত পেতে পারবেন। তবে আপনার বিনিয়োগের টাকার ওপর নির্ভর করে আরও বেশি অংকের টাকা ফেরত পাওয়া সম্ভব।
সাধারণ জনগণের সুবিধার্থে জানিয়ে রাখি যে, সর্বোচ্চ ১৫ বছরের জন্য এই যোজনার আওতায় বিনিয়োগ করা সম্ভব। কন্যা সন্তানের ২১ বছর বয়স হলে এই যোজনা থেকে ফেরত পাওয়া সম্পূর্ণ টাকা কন্যা সন্তান নিজের পড়াশোনার ক্ষেত্রে ব্যবসার ক্ষেত্রে অথবা বিয়ের জন্য ব্যবহার করতে পারবেন। তবে এখানেই শেষ নয়, নাগরিকদের সুবিধার খাতিরে সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনাকে কেন্দ্র করে আরো বেশ কতগুলি নিয়ম কার্যকর করা হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে। আর এই নিয়মগুলির মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য একটি নিয়ম হল সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনার অ্যাকাউন্ট ভারতের যেকোনো প্রান্তের পোস্ট অফিসে অথবা ব্যাংকে ট্রান্সফার করা সম্ভব। এই যোজনার অধীনে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ৮০ সি ধারায় আয় করার ক্ষেত্রেও ছাড় পাওয়া যায়। অন্যদিকে আপনি যদি কোনভাবে কিস্তির টাকা দিতে ভুলে যান তবে আপনাকে সর্বোচ্চ ৫০ টাকা জরিমানা দিতে হবে। সুতরাং আপনিও যদি আপনার কন্যা সন্তানের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে চান তবে আজই সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা আওতায় নিজের কন্যা সন্তানের নাম নথিভুক্ত করুন।
সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনয় আবেদনের প্রক্রিয়া:-
কেন্দ্র সরকারের তরফে জারি করা তথ্য অনুসারে, সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা আওতায় নিজের কন্যা সন্তানের নাম নথিভুক্ত করার ক্ষেত্রে আপনাকে নিজের নিকটবর্তী ব্যাংক অথবা পোস্ট অফিসে যেতে হবে এবং সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা ফর্মটি সংগ্রহ করতে হবে। এরপর ওই ফর্মে উল্লেখিত সমস্ত তথ্য আপনাকে পূরণ করতে হবে। সমস্ত তথ্যগুলি সঠিকভাবে প্রদান করা হলে ফর্মে উল্লিখিত নথি সহকারে এই ফর্মটি উক্ত ব্যাংক অথবা পোস্ট অফিসে গিয়ে জমা দিতে হবে। এরপর আপনাকে সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা প্রথম কিস্তির টাকা জমা করতে হবে, তাহলেই আপনার কন্যা সন্তানের সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনার অ্যাকাউন্ট অ্যাক্টিভ হয়ে যাবে।
আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নথিপত্র:-
১. কন্যা সন্তানের বার্থ সার্টিফিকেট।
২. কন্যা সন্তানের পিতা, মাতা অথবা অভিভাবকের ফটো আইডেন্টিটি প্রুফ।
৩. আবেদনকারীর পিতা, মাতা অথবা অভিভাবকের ভারতবর্ষের স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার প্রমাণপত্র।
৪. পিতা ও মাতার প্যান কার্ড।
৫. পিতা ও মাতার ভোটার কার্ড।
৬. যমজ সন্তানের ক্ষেত্রে মেডিকেল সার্টিফিকেট।
এছাড়াও আপনি যে ব্যাংক অথবা পোস্ট অফিসে সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনার অ্যাকাউন্ট খুলতে চান সেই পোস্ট অফিস বা ব্যাংকের তরফে অন্য কোনো নথি জমা করার নির্দেশ দেওয়া হলে উপরোক্ত নথির সাথে সেই সকল নথি জমা দিতে হবে।