জীবন ও জীবিকার প্রয়োজন সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষ বিভিন্ন ধরনের পেশার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন ক্ষেত্রের চাকরি এবং নানা ধরনের ব্যবসা সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। তবে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের ব্যবসা এবং চাকরি ক্ষেত্রে যুক্ত থাকার কারণে প্রত্যেকটি মানুষের বেতন আলাদা আলাদা হয়ে থাকে। তবে বেতন পৃথক হলেও খরচ তো কম নয়। আর বর্তমানে মূল্যবৃদ্ধির কারণে সাধারণ মানুষের আয় ও ব্যয় প্রায় সমান হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার ফলে পরিবারের বিভিন্ন ক্ষেত্রের খরচ সামলে উঠে বহু মানুষই সঞ্চয়ের জন্য চিন্তা করতে পারেন না। আর তাই আজকে আমরা টাকা সঞ্চয়ের এমন এক বিশেষ পদ্ধতি নিয়ে হাজির হয়েছি যার মাধ্যমে সাধারণ আপনারা অত্যন্ত সহজেই উপার্জিত অর্থ থেকে কিছু পরিমাণ অর্থ সঞ্চয় করতে পারবেন।
চলুন তবে অর্থ সঞ্চয়ের এই বিশেষ পদ্ধতিটি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক:-
আজ আমরা অর্থ সঞ্চয়ের যে বিশেষ পদ্ধতির নিয়ে কথা বলতে চলেছে তা হল ৫০:৩০:২০ পদ্ধতি। যে সমস্ত ব্যক্তিরা চাকরিক্ষেত্রে যুক্ত রয়েছেন তারা নিজেদের ক্রেডিট হওয়া স্যালারির ওপর এই পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারবেন এবং যারা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন তারা নিজেদের মোট আয়ের ওপর এই পদ্ধতি অ্যাপ্লাই করতে পারবেন। এই পদ্ধতিতে একটি বিশেষ ক্যালকুলেশন মেনে অনুসরণ করতে হবে, এই ক্যালকুলেশনটি হলো:
এই ৫০:৩০:২০ পদ্ধতি অনুসরণ করে আপনার মোট উপার্জিত অর্থকে ৫০%, ৩০%, ২০% এই তিনটি ভাগে ভাগ করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি যে টাকা উপার্জন করবেন তার মধ্যে থেকে ৫০ শতাংশ অর্থ খাদ্য, পানীয়, জীবনযাপনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় খরচ এবং শিক্ষাক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় খরচের জন্য ব্যবহার করবেন। আপনি যদি ভাড়া বাড়িতে বসবাস করে থাকেন অথবা কোন কারণে ঋণ নিয়ে থাকেন কিংবা ইএমআইতে কোন জিনিস কিনে থাকেন তবে বাড়ির মাসিক ভাড়া অথবা ইএমআই আপনাকে এই ৫০ শতাংশ টাকার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। অর্থাৎ আপনার আয়ের ৫০ শতাংশ অর্থ দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় সমস্ত জিনিসপত্রের জন্য আলাদা করে রাখুন।
আরও পড়ুন:- রেশনের সঙ্গে গ্রাহকদের অতিরিক্ত টাকা দিতে চলেছে রাজ্য সরকার। কারা কারা টাকা পাবেন জেনে নিন।
এরপর আসি পরবর্তী ৩০ শতাংশের কথায়। মাসের শুরুতেই আপনার বেতনের ৫০ শতাংশ টাকা কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যয় করবেন তা নির্ধারণ করে নিয়ে বাকি ৫০ শতাংশের মধ্যে থেকে ৩০ শতাংশ টাকা দিয়ে আপনার পছন্দ অনুসারে বই, জামা কাপড়, গেম, যেকোনো ইলেকটনিক্স গেজেট কিনতে পারেন কিংবা গাড়ি, বাইক সারাই করার ক্ষেত্রে অথবা গাড়ি, বাইক সংক্রান্ত অন্যান্য খরচগুলির জন্য ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও এই ৩০ শতাংশ টাকা আপনি ঘুরতে যাওয়ার ক্ষেত্রে অথবা সিনেমা দেখার ক্ষেত্রে অথবা বাইরে খাওয়া-দাওয়া করার জন্য কিংবা চিকিৎসার জন্য খরচ করতে পারবেন। অর্থাৎ বাকি ৫০ শতাংশ টাকার মধ্যে থেকে ৩০ শতাংশ টাকা আপনি আপনার ইচ্ছা পূরণের জন্য ব্যবহার করতে পারবেন।
সবশেষে রইল বাকি ২০ % টাকা। এই ২০ শতাংশ টাকা আপনি প্রত্যেক মাসে সঞ্চয় করতে পারেন এবং আপনার পছন্দ অনুসারে যেকোনো ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে পারবেন। এই ২০ শতাংশ টাকা আপনি মিউচুয়াল ফান্ডে এসআইপি এবং বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন। এছাড়াও ভারতের বিভিন্ন ব্যাংক এবং পোস্ট অফিসের তরফে কার্যকরী নানা ধরনের স্কিমের অধীনেও বিনিয়োগ করতে পারেন। আর প্রত্যেক মাসে কিছু পরিমাণ টাকা বিনিয়োগের মাধ্যমে আপনি প্রতিবছর যথেষ্ট টাকা সঞ্চয় করতে পারবেন। তবে সঞ্চয় করার শুরুতেই যদি আপনি ২০ শতাংশ টাকা সঞ্চয় না করতে পারেন তবে অবিলম্বে নিজের প্রয়োজনীয় এবং অপ্রয়োজনীয় ক্ষেত্রের খরচগুলির একটি নির্দিষ্ট তালিকা তৈরি করুন এবং যত দ্রুত সম্ভব অপ্রয়োজনীয় খরচগুলি বন্ধ করুন। এক্ষেত্রে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পোশাক কেনা, প্রত্যেকদিন বাইরে খাবার খাওয়ার মত অভ্যাসগুলি ত্যাগ করুন, প্রয়োজনে ক্রেডিট কার্ডের অতিরিক্ত ব্যবহারও বন্ধ করুন।
বর্তমানে যখন সমগ্র ভারতজুড়ে মূল্যবৃদ্ধির কারণে সাধারণ মানুষের খরচ ক্রমাগত হারে বাড়ছে, ঠিক সেই সময়ে দাঁড়িয়ে ৫০:৩০:২০ ফর্মুলা সাধারণ মানুষকে প্রত্যেক মাসে কিছু পরিমাণ অর্থ সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সাহায্য করবে দাবি করা হয়েছে বিভিন্ন সূত্রের তরফে প্রকাশিত রিপোর্টে। অর্থাৎ আপনিও যদি প্রত্যেক মাসে কিছু পরিমাণ টাকা সঞ্চয় করতে চান এবং নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে চান তবে এই ফর্মুলাটি প্রয়োগ করে দেখতে পারেন।