রাজ্য সরকারের তরফে কার্যকরী সমস্ত প্রকল্পের মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য একটি প্রকল্প হল স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প বা স্বাস্থ্য সাথী কার্ড। ২০১৬ সালে কার্যকরী এই স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের আওতায় সমগ্র রাজ্যে ৪০ লক্ষেরও বেশি মানুষ ইতিমধ্যেই নিজেদের নাম নথিভুক্ত করেছেন। সময়ের সাথে বাড়তে থাকা চিকিৎসার খরচের বিষয়টি মাথায় রেখেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে এই স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প চালু করা হয়েছিল বলেই দাবি করেছেন প্রশাসনিক মহলের কর্তারা। ভারত জুড়ে বাড়তে থাকা মূল্য বৃদ্ধির কারণে সাধারণ মানুষকে যাতে চিকিৎসা ক্ষেত্রে কোনরকম সমস্যার সম্মুখীন না হতে হয় তা নিশ্চিত করাই স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প -এর মূল উদ্দেশ্য।
এই প্রকল্প কার্যকর করার সময় রাজ্য সরকারের তরফে জারি করা নির্দেশিকায় জানানো হয়েছিল যে, দুয়ারে সরকারের ক্যাম্প কিংবা পঞ্চায়েত অফিস, বিডিও অফিস এবং মিউনিসিপাল কর্পোরেশন থেকে এই স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প কিংবা স্বাস্থ্য সাথী কার্ড -এর জন্য আবেদন জানানো সম্ভব হবে। তবে সমগ্র রাজ্যের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষের সুবিধার দিকটি মাথায় রেখে ২০২২ সালে অনলাইনের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সাথী কার্ড -এর জন্য আবেদনের প্রক্রিয়া কার্যকর করা হয়।
পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের তরফে কার্যকারী স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পটি হল একটি বীমা প্রকল্প। এই প্রকল্পের আওতায় কার্যকরী স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের মাধ্যমে প্রত্যেক বছরে পরিবার পিছু ৫ লক্ষ টাকার চিকিৎসা সুবিধা পাওয়া সম্ভব। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য সাথীর মাধ্যমে চিকিৎসার প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণরূপে ক্যাশলেস। অর্থাৎ কোনরকম কাগজপত্র ছাড়াই শুধুমাত্র স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের সাহায্যে যেকোন হাসপাতাল থেকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসা পাওয়া সম্ভব। তবে এখানেই শেষ নয়, স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের আওতাভুক্ত ব্যক্তিরা অসুস্থতার সময়ে বিনামূল্যে ওষুধ, খাবার, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সুযোগ পেয়ে থাকেন। তবে এই সমস্ত সুবিধার পাশাপাশি স্বাস্থ্য সাথী কার্ড -এর সব থেকে আকর্ষণীয় বিষয়টি হলো, এই ৫ লক্ষ টাকার স্বাস্থ্য বীমা পাওয়ার জন্য এই প্রকল্পের আওতাভুক্ত ব্যক্তিদের একটি টাকাও প্রিমিয়াম দিতে হয় না।
স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের আওতাভুক্ত সমস্ত নাগরিকদের বীমার প্রিমিয়ারের টাকা দেওয়ার দায়ভার সম্পূর্ণরূপে রাজ্য সরকারের। এমনকি পরিবারের সদস্য সংখ্যার উপরেও এই কার্ডের প্রিমিয়াম কিংবা চিকিৎসার খরচ কোনোভাবে পরিবর্তিত হয় না, ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী যেকোন নাগরিকই এই প্রকল্পের আওতায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। এর পাশাপাশি সাধারণ মানুষের স্বার্থে আরো জানিয়ে রাখি যে, পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী যেকোন নাগরিকই এই স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের আওতায় নিজেদের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন এক্ষেত্রে পরিবারের বার্ষিক আয় পর্যন্ত বিচার করা হয় না। এমনকি সরকারি এবং বেসরকারি ক্ষেত্রে চাকুরীরত যে সমস্ত ব্যক্তিরা কোন রকম হেলথ প্যাকেজ পান না তারাও এই প্রকল্পের আওতায় নিজেদের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন।
আরও পড়ুন:- খুব তাড়াতাড়ি টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে? মেনে চলুন এই নিয়মগুলি।
বাড়িতে বসেই স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের আওতায় নিজেদের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন:-
১. স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের জন্য আবেদনের ক্ষেত্রে প্রথমেই আপনাকে স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের অফিসের ওয়েবসাইট https://swasthyasathi.gov.in/ -এ যেতে হবে।
২. এরপর হোম পেইজে থাকা মেনু বারে ক্লিক করতে হবে এবং আপনার সামনে আসা অপশন গুলির মধ্যে থেকে আপনাকে Apply Online অপশনটি নির্বাচন করে নিতে হবে।
৩. উপরোক্ত অপশনে ক্লিক করলে আপনার সামনে পুনরায় অনেকগুলি অপশন আসবে যার মধ্যে থেকে আপনাকে Online Application for Swasthya Sathi Card অপশনে ক্লিক করতে হবে।
৪. পরবর্তীতে আপনার সামনে যে পেজটি আসবে তাতে আপনাকে আপনার মোবাইল নম্বরটি সঠিকভাবে লিখতে হবে এবং GET OTP অপশনে ক্লিক করতে হবে। পরবর্তীতে আপনার রেজিস্টার্ড মোবাইল নম্বরে OTP আসলে OTP টি সঠিক স্থানে, সঠিকভাবে লিখে SUBMIT বাটনে ক্লিক করুন।
৫. উপরোক্ত অপশনে ক্লিক করলে আপনার সামনে স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের জন্য আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ফর্মটি চলে আসবে। উক্ত ফর্মে আপনাকে আপনার জেলার নাম, ব্লক বা মিউনিসিপ্যালিটি, গ্রামের নাম, পঞ্চায়েতের নাম, ক্যাটাগরি, ঠিকানা, পিন কোড, আবেদনকারীর নাম, পিতা অথবা স্বামীর নাম, আবেদনকারী রাজ্য সরকারের কোনো ডিপার্টমেন্টের আওতায় কর্মরত কিনা, রাজ্য সরকারের আওতাধীন কোনো ডিপার্টমেন্টে কর্মরত হলে সেই ডিপার্টমেন্টের নাম, অফিসের ঠিকানা সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্যগুলি সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে।
৬. পরবর্তীতে আপনার পরিবারের সদস্যরা সকলে পুরুষ নাকি মহিলা সে বিষয়ে সম্পর্কিত তথ্য প্রদান করতে হবে। এক্ষেত্রে MEMBERS OF FAMILY ARE অপশনের অধীনে ALL ARE MEN, ALL ARE FEMALE, BOTH MALE AND FEMALE এই তিনটি অপশন রয়েছে। আপনার পরিবারের সমস্ত সদস্য যদি পুরুষ হয়ে থাকে তবে ALL ARE MEN অপশনে ক্লিক করুন। আপনার পরিবারের সমস্ত সদস্য যদি মহিলা হয়ে থাকেন তবে ALL ARE FEMALE অপশনটি নির্বাচন করুন এবং আপনার পরিবারের যদি পুরুষ এবং মহিলা উভয় সদস্যই থেকে থাকেন তবে BOTH MALE AND FEMALE অপশনটি নির্বাচন করুন।
৭. এরপর ফর্মের নিচের দিকে থাকা MEMBER LIST -এর ডানদিকে থাকা EDIT অপশনে ক্লিক করতে হবে এবং মূল আবেদনকারীর নাম, বয়স, আধার নম্বর, খাদ্যসাথী কার্ড নম্বর, উক্ত ব্যক্তি কোনো জীবিকার সাথে যুক্ত রয়েছেন কিনা (উক্ত ব্যক্তি যদি কোনো ক্ষেত্রে কাজ না করে থাকেন তবে UNEMPLOYED অপশনটি নির্বাচন করুন, সরকারি ক্ষেত্রে কাজ করে থাকলে GOVT. EMPLOYED অপশনে ক্লিক করুন, নিজস্ব কোন ব্যবসা থাকলে SELF EMPLOYED অপশনে ক্লিক করুন, প্রাইভেট সেক্টরে কাজ করে থাকলে PRIVATE EMPLOYED অপশনে ক্লিক করুন), মোবাইল নম্বর সঠিকভাবে লিখে OK বাটনে ক্লিক করুন।
৮. এরপর ADD NEW MEMBER অপশনে ক্লিক করে আপনার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের তথ্যগুলি একইভাবে প্রদান করুন। পরিবারের সকল সদস্যদের তথ্য প্রদানের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হলে SUBMIT অপশনে ক্লিক করুন, তাহলেই স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের জন্য আবেদনের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হবে। এক্ষেত্রে আপনাকে একটি অ্যাপ্লিকেশন আইডি দেওয়া হবে যার মাধ্যমে আপনি পরবর্তীতে নিজের স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের স্ট্যাটাস চেক করতে পারবেন।
আবেদনকারীদের সুবিধার্থে জানিয়ে রাখি যে, আপনার আবেদন পত্র এবং আপনার ও আপনার পরিবার সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের কর্তৃপক্ষের তরফে খতিয়ে দেখা হবে। সমস্ত তথ্য ঠিক থাকলে ভেরিফিকেশনের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হওয়ার পর আপনাকে এসএমএস এর মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে কবে কোথায় আপনার স্বাস্থ্য সাথী কার্ডটি দেওয়া হবে। উক্ত দিনে নির্দিষ্ট স্থানে উপস্থিত হলেই আপনি আপনার স্বাস্থ্য সাথী কার্ডটি পেয়ে যাবেন।