শ্রমিকদের উন্নয়নের জন্য পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের তরফে বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প এবং স্কিম লঞ্চ করা হয়েছে। তবে রাজ্য সরকারের তরফে কার্যকরী এই সমস্ত প্রকল্প, স্কিম -এর মধ্যে নির্মাণ শ্রমিক প্রকল্প রাজ্য সাধারণ জনগণের মধ্যে যথেষ্ট জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের তরফে দিনমজুর শ্রমিকদের আর্থিক উন্নয়ন এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য নির্মাণ শ্রমিক প্রকল্প নামক এই বিশেষ প্রকল্পটি লঞ্চ করা হয়েছে। আর এই প্রকল্পটি সমগ্র পশ্চিমবঙ্গবাসীর কাছে লেবার কার্ড নামে বিশেষ পরিচিত। আর আজকের এই পোস্টে আমরা লেবার কার্ডের জন্য আবেদনের প্রক্রিয়া, আবেদনের ক্ষেত্রে আবশ্যক নথি, লেবার কার্ডের মাধ্যমে কি কি সুবিধা পাওয়া যায় তা সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি।
লেবার কার্ড কি?
সমগ্র পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে বিভিন্ন প্রকার কাজকর্মের সঙ্গে জড়িত দিনমজুরদের আর্থিক সুরক্ষা প্রদানের জন্যই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে লেবার কার্ড কার্যকর করা হচ্ছে। এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তি মারফত জানা গিয়েছে যে, পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ীভাবে বসবাসকারী ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সী যে সমস্ত শ্রমিকরা সড়কপথ, রেল, ট্রামলাইন, বিমানবন্দর, বাড়ি নির্মাণ থেকে শুরু করে সেচনিকাশি, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, বিজলি ও জল সরবরাহ ব্যাবস্থা, টেলিফোন ও টেলিফোনের টাওয়ার লাগানো, জলাশয়, জলাধার, সুড়ঙ্গ বানানো, পাইপ লাইন, তেল ও গ্যাস সংস্থাপন ইত্যাদি কাজ নির্মাণ ও মেরামতি, রক্ষণাবেক্ষণের মতো ক্ষেত্রগুলিতে দিনমজুরের কাজ করছেন তারাই এই লেবার কার্ড এর জন্য আবেদন জানাতে পারবেন।
লেবার কার্ডের জন্য আবেদনের ক্ষেত্রে বিগত ১ বছরের মধ্যে একজন নির্মাণ কর্মীকে অন্ততপক্ষে ৯০ দিন কাজ করতে হবে। উপরোক্ত শর্তের পরিপ্রেক্ষিতেই পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী দিনমজুররা নিজের এবং নিজের পরিবারের সুরক্ষার জন্য লেবার কার্ডের আওতায় নিজের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন। লেবার কার্ডের আওতায় নাম নথিভুক্ত করলে একজন শ্রমিককে তার সন্তানের পড়াশোনার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অর্থ থেকে শুরু করে চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অর্থ দেওয়া হয়ে থাকে। এর পাশাপাশি ৬০ বছরের পর এই সমস্ত নির্মাণ কর্মীদের ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ৮৭০ টাকা পর্যন্ত বেতন দেওয়া হয়ে থাকে। এমনকি লেবার কার্ড রয়েছে এইরূপ নির্মাণ কর্মীর মৃত্যু ঘটলে তার পরিবারকে ৩০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অনুদান দেওয়া হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন:- সরকারি নিয়ম অনুযায়ী আপনি নিজের বাড়িতে কত ক্যাশ টাকা রাখতে পারেন?
লেবার কার্ডের জন্য আবেদন জানাবেন কিভাবে:-
১. বাড়িতে বসে অনলাইনের মাধ্যমে লেবার কার্ডের জন্য আবেদন জানানোর ক্ষেত্রে আপনাকে প্রথমেই রাজ্য সরকারের তরফে কার্যকরী e district পোর্টালে https://edistrict.wb.gov.in/ পৌঁছে যেতে হবে।
২. এরপর হোম পেইজে থাকা New Registration অপশনে ক্লিক করুন এবং আপনার সামনে আসা পেজটিতে আপনার নাম, মোবাইল নম্বর, ইমেইল এড্রেস লিখে NEXT অপশনে ক্লিক করুন। পরবর্তীতে আপনার পছন্দ সই USER NAME এবং PASSWORD নির্বাচন করে OTP ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশনের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করুন। তবে যারা ইতিপূর্বে এই পোর্টালে রেজিস্ট্রেশনের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করেছেন তাদের আর আলাদা করে রেজিস্ট্রেশন করার কোন প্রয়োজনীয়তা নেই।
৩. এরপর USER NAME এবং PASSWORD -এর মাধ্যমে Login -এর প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করুন। এরপর আপনার সামনে যে পেজটি আসবে তাতে আপনি অনেকগুলি অপশন দেখতে পারবেন, এর মধ্যে থেকে আপনি LABOUR অপশনটি বেছে নিন এবং এই অপশনের আওতাধীন BUILDING AND OTHER CONSTRUCTION WORKERS BENEFICIARY REGISTRATION PROCESS অপশনে ক্লিক করুন।
৪. পরবর্তীতে আপনার সামনে যে পেজটি আসবে তাতে লেবার কার্ডের জন্য আবেদনের ক্ষেত্রে আবশ্যক সমস্ত তথ্য চলে আসবে, সমস্ত তথ্য পড়ে নিয়ে পেজের একেবারে নিচের দিকে থাকা চেক বক্সে ক্লিক করে Apply অপশনে ক্লিক করুন। এরপর আপনার সামনে যে পেজটি আসবে তাতে আপনার নাম, আপনি বিপিএল তালিকাভুক্ত কিনা, জন্ম তারিখ, বয়স, মোবাইল নম্বর, ইমেইল এড্রেস, আধার কার্ড নম্বর আপনার বৈবাহিক স্থিতি সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য সঠিকভাবে উল্লেখ করতে হবে।
৫. এরপর আপনাকে আপনার বর্তমান ঠিকানা সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য সঠিকভাবে উল্লেখ করতে হবে এবং Save and Next অপশনে ক্লিক করতে হবে। উপরোক্ত অপশনে ক্লিক করলেই আপনার সামনে একটি নতুন পেজ আসবে। এই পেজটির শুরুতেই আপনাকে আপনার পিতা/ মাতা /অভিভাবক কিংবা স্বামীর সমস্ত তথ্য সঠিকভাবে উল্লেখ করতে হবে। এরপর আপনাকে আপনার স্থায়ী ঠিকানার সমস্ত তথ্য সঠিকভাবে উল্লেখ করতে হবে। অর্থাৎ আপনার গ্রাম, জেলা, রাজ্য, সাব ডিস্ট্রিক্ট, পুলিশ স্টেশন, পোস্ট অফিস সহ স্থায়ী ঠিকানা সংক্রান্ত অন্যান্য তথ্য উল্লেখ করা আবশ্যক।
৬. পরবর্তীতে আপনি বিগত ১ বছরে যে কাজ করেছেন তার সমস্ত তথ্য সঠিকভাবে লিখতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি কোন পদে কাজ করছেন, কতদিন ধরে কাজ করছেন, যে সংস্থার অধীনে কাজ করছেন তার রেজিস্ট্রেশন নম্বর, যেখানে কাজ করছেন তার ঠিকানা সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্যগুলি সঠিকভাবে উল্লেখ করুন।
৭. তারপর আপনাকে আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর, ব্যাংকের নাম, ব্যাংকের ব্রাঞ্চের নাম, IFSC কোড সহ আপনার ব্যাংক একাউন্টের সমস্ত ডিটেইলস নির্ভুলভাবে প্রদান করতে হবে।
৮. পরবর্তীতে আপনার ওপর আপনার পরিবারের কতজন সদস্য নির্ভর করে রয়েছে তা উল্লেখ করুন এবং নির্ভরশীল সদস্যদের সমস্ত তথ্য প্রদান করুন। এরপর আপনার নমিনির নাম, বয়স, বসবাসের ঠিকানা, আপনার সঙ্গে নমিনির সম্পর্ক সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্যগুলি সঠিকভাবে লিখুন। সবশেষে আপনার কাছে আপনার কাজ সংক্রান্ত আরো কিছু তথ্য জানতে চাওয়া হবে। এই সমস্ত তথ্যগুলি সঠিকভাবে পূরণ করে নিচে থাকাটা Terms and Conditions -এর বক্সে ক্লিক করে Save and Next অপশনে ক্লিক করুন।
৯. উপরোক্ত অপশনে ক্লিক করলেই আপনার সামনে ফর্মটির একটি প্রিভিউ চলে আসবে এক্ষেত্রে যদি সমস্ত তথ্য ঠিক থাকে তবে Attach Supporting documents অপশনে ক্লিক করুন এবং পোর্টালে উল্লেখিত সমস্ত ডকুমেন্টগুলি আপলোড করুন। এক্ষেত্রে পোর্টালে উল্লিখিত ২৭ নম্বর ফর্মটি আপনাকে সংগ্রহ করতে হবে এবং ফর্মটি নিজে হাতে সঠিকভাবে পূরণ করে স্ক্যান করে পোর্টালে আপলোড করতে হবে। সমস্ত নথি সঠিকভাবে আপলোড করে Submit অপশনে ক্লিক করলেই আবেদনের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হবে।
আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নথি সমূহ:-
১. আবেদনকারীর বয়সের প্রমাণপত্র।
২. আবেদনকারী বর্তমানে যে ব্যক্তি অথবা সংস্থার অধীনে কর্মরত তার থেকে পাওয়া শংসাপত্র।
৩. আবেদনকারীর পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি।
আবেদন ফি:-
লেবার কার্ডের অধীনে নাম নথিভুক্ত করার জন্য আপনাকে ৫০ টাকা ফি প্রদান করতে হবে। তবে আপনি যদি CSC থেকে আবেদন জানিয়ে থাকেন তাহলে আপনাকে অতিরিক্ত ২০ টাকা ফি জমা করতে হবে।