সমগ্র দেশজুড়ে চলতে থাকা এই মূল্যবৃদ্ধির মরশুমে অধিকাংশ যুবক-যুবতীই তাদের নিজস্ব ব্যবসা শুরু করতে উদ্যোগী হয়েছেন। অনেকেই আবার নিজের বাড়িতে বসে অর্থ উপার্জন করতে চান। তবে কিভাবে অত্যন্ত সহজেই বাড়িতে বসে নিজের ব্যবসা শুরু করা সম্ভব বা বাড়িতে বসেই সামান্য কিছু কাজ করে টাকা আয় করা সম্ভব এই সমস্ত তথ্যগুলি সম্পর্কে সঠিকভাবে না জানার কারণে যুবক-যুবতীদের ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রে নানা রকম সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তবে আজ আমরা অর্থ উপার্জনের এমন এক উল্লেখযোগ্য পদ্ধতি নিয়ে হাজির হয়েছি যার মাধ্যমে আপনারা বাড়িতে বসেই যথেষ্ট টাকা উপার্জন করে নিতে পারবেন। চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক কিভাবে আপনারা বাড়িতে বসে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন:-
ব্যাংকের বিভিন্ন কাজের প্রয়োজনে আপনারা বহুবার ব্যাংক সিএসপিতে গিয়েছেন। স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া, পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক, HDFC ব্যাংক, আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক সহ ভারতে অবস্থিত বিভিন্ন ব্যাংকের অসংখ্য CSP সমগ্র দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এই সিএসপি গুলিতে টাকা লেনদেন সহ ব্যাংক একাউন্টের ব্যালেন্স চেক করা, পাসবুক আপডেট করা, পাসবুক প্রিন্ট করা, চেক জমা, ইন্সুরেন্স পলিসি, লোন প্রদান সহ ব্যাংক সম্পর্কিত একাধিক কাজকর্ম করা হয়ে থাকে। আর এই সমস্ত কাজকর্মে সাহায্য করার বদলে CSP -এর কর্ণধারকে ব্যাংকের তরফে কমিশন দেওয়া হয়ে থাকে। অর্থাৎ এই সমস্ত সিএসপি গুলির মাধ্যমে যত বেশি পরিমাণে নতুন অ্যাকাউন্ট খোলা থেকে শুরু করে ফিক্সড ডিপোজিট, রেকারিং অ্যাকাউন্ট তৈরি করা, ইন্সুরেন্স পলিসি তৈরি, ঋণ দান, টাকা লেনদেন -এর মত কাজ গুলি করা হবে CSP এর কর্ণধার ব্যাংকের তরফে তত বেশি কমিশন পাবেন।
সঠিকভাবে কাজ করতে পারলে সিএসপি থেকে চাকরির মাইনের থেকেও বেশি টাকা উপার্জন করা সম্ভব। আর আপনি চাইলেই এখন নিজের বাড়িতে যেকোন ব্যাংকের সিএসপি তৈরি করার মাধ্যমে যথেষ্ট টাকা উপার্জন করে নিতে পারবেন। সুতরাং আপনিও যদি বাড়িতে বসে কাজ করার মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করতে চান তবে আপনিও নিজের বাড়িতে সিএসপি গঠনের মাধ্যমে যথেষ্ট অর্থ উপার্জন করে নিতে পারবেন। তবে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের সুবিধার্থে জানিয়ে রাখি যে, সিএসপি নেওয়ার জন্য আপনাকে প্রথমেই বেশ খানিকটা টাকা খরচ করতে হবে। সিএসপি তৈরি করার জন্য একটি ২০০ থেকে ২৫০ বর্গফুটের ঘর (ঘরটি আপনার নিজস্ব বাড়িতেও হতে পারে অথবা ভাড়া নেওয়া কোন জায়গাতেও হতে পারে) প্রয়োজন হবে। এছাড়াও কম্পিউটার কিংবা ল্যাপটপ, ভালো ইন্টারনেট কানেকশন, প্রিন্টার, ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার, পাসবুক প্রিন্টার -এর মতো যন্ত্রগুলি প্রয়োজন হবে। এছাড়াও সিএসপি আইডি নেওয়ার জন্যও বেশকিছু টাকা বিনিয়োগ করার প্রয়োজন হয়ে থাকে। তবে ভালোভাবে সিএসপি টিকে চালাতে পারলে বিনিয়োগের টাকা অত্যন্ত দ্রুত উঠে আসবে।
সিএসপি এর মাধ্যমে কত টাকা উপার্জন করা সম্ভব?
বিভিন্ন রিপোর্টে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে সিএসপিতে প্রত্যেকদিন কি পরিমাণ কাজ হচ্ছে এবং কি ধরনের কাজ হচ্ছে তা যাচাই করার মাধ্যমে ব্যাংকের তরফে সিএসপি এর কর্ণধারকে একটি নির্দিষ্ট টাকার অঙ্ক কমিশনরূপে দেওয়া হয়ে থাকে, আর এই কমিশনের ভিত্তিতেই সিএসপি থেকে অর্থ উপার্জন করা সম্ভব। বিভিন্ন রিপোর্টে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, সিএসপি -এর মাধ্যমে যদি সারাদিনে ১ লক্ষ টাকার লেনদেন করা যায় তবে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা উপার্জন করা সম্ভব। অন্যদিকে সিএসপি -এর মাধ্যমে সারাদিনে ২ লক্ষ টাকা লেনদেন করা হলে অন্ততপক্ষে ১০০০ টাকা উপার্জন করা সম্ভব। সুতরাং প্রত্যেকদিন ১ লক্ষ টাকা লেনদেন করা হলে প্রতি মাসে ১৫,০০০ টাকার অর্থ উপার্জন করা সম্ভব। প্রতিদিন ২ লক্ষ টাকার লেনদেন করা হলে প্রত্যেক মাসে সিএসপি থেকে ৩০০০০ টাকা পর্যন্ত উপার্জন করা সম্ভব। অর্থাৎ আপনি যত বেশি টাকা লেনদেন করতে পারবেন আপনার কমিশনের পরিমাণও তত বাড়বে। তবে এখানেই শেষ নয়, নতুন একাউন্ট খোলা, ইন্সুরেন্স পলিসি, ফিক্সড ডিপোজিট, পাসবুক আপডেট সহ ব্যাংকের বিভিন্ন ধরনের কাজের জন্য আলাদা আলাদাভাবে কমিশন দেওয়া হয়ে থাকে। সুতরাং প্রতিমাসে আপনি অন্ততপক্ষে ২০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত উপার্জন করে নিতে পারবেন।
আরও পড়ুন:- আবারো বাড়ানো হলো গরমের ছুটি। কবে থেকে স্কুল খুলবে, জেনে নিন এখনই।
কিভাবে সিএস পি এর জন্য আবেদন জানাবেন?
অনলাইন এবং অফলাইন উভয় প্রক্রিয়াতেই CSP এর জন্য আবেদন জানানো সম্ভব। তবে অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন জানানোর ক্ষেত্রে বেশ কিছু আশঙ্কা রয়েই যায়। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে অনলাইনের মাধ্যমে সিএসপি আইডি দেওয়ার বিনিময় টাকা নেওয়া হয়েছে কিন্তু গ্রাহককে সিএসপি আইডি ও পাসওয়ার্ড প্রদান করা হয়নি। সুতরাং আপনি যদি সিএসপি নিতে চান তবে অফলাইনের মাধ্যমে আবেদন করাই শ্রেয়। অফলাইনের মাধ্যমে সিএসপি -এর জন্য আবেদন জানাতে গেলে প্রথমে আপনাকে আপনি যে ব্যাংকের সিএসপি নিতে চাইছেন সেই ব্যাংকের ম্যানেজারের সঙ্গে দেখা করতে হবে। এরপর সিএসপি নেওয়ার জন্য ব্যাংকের ম্যানেজারের অনুমতি নিতে হবে। এর পাশাপাশি ব্যাংক ম্যানেজারের কাছ থেকে আরো জেনে নিতে হবে যে, উক্ত ব্যাংকের সিএসপি কোন কোম্পানি প্রদান করে। পরবর্তীতে ওই নির্দিষ্ট কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করার মাধ্যমে আপনি উক্ত ব্যাংকের CSP নেওয়ার জন্য আবেদন জানাতে পারবেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ব্যাংকগুলির তরফে সরাসরি সিএসপি আইডি প্রদান করা হয় না, ব্যাংকের তরফে নির্ধারিত বিভিন্ন কোম্পানি এই সিএসপি আইডি এবং পাসওয়ার্ড গ্রাহকদের প্রদান করে থাকে। এই পাশাপাশি আরো জানিয়ে রাখি যে, সিএসপি আইডি এবং পাসওয়ার্ড পাওয়ার পূর্বে, কোনোভাবেই টাকা পেমেন্ট করবেন না, না হলে আপনাকে পরবর্তীতে যথেষ্ট সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।
সিএসপি -এর জন্য আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নথিপত্র:-
১. আবেদনকারীর ভোটার কার্ড
২. আধার কার্ড
৩. প্যান কার্ড
৪. ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সমস্ত তথ্য
৫. পুলিশ ভেরিফিকেশন সার্টিফিকেট
৬. যে জায়গায় সিএসপি খোলা হচ্ছে তার সমস্ত কাগজপত্র
৭. জায়গা ভাড়া নেওয়া হলে তার রশিদ।