কলকাতার রবিবার সন্ধ্যা মানেই কোথাও না কোথাও জমজমাট অনুষ্ঠান। কিন্তু মিলনমেলার (Milon Mela) ওই মঞ্চে যা ঘটল, তা যেন স্রেফ কনসার্ট নয়—আধা কাব্য, আধা র্যাপ, আর তার সঙ্গে খানিকটা রাজনৈতিক কৌতুকও। আলো ঝলমলে স্টেজে অনির্বাণ ভট্টাচার্য হাজির হলেন তাঁর নতুন ব্যান্ড “হুলি-গান-ইজ়ম” নিয়ে। তবে শুরুটা স্বাভাবিক ভাবে হলেও মাঝপথেই আসে আসল টুইস্ট।
ক্ল্যাসিক সুর থেকে আচমকাই বেরিয়ে এল র্যাপের ছন্দ, আর সেখানে সরাসরি ঢুকে পড়ল রাজনীতির আঙিনা। কোনও পরোক্ষ ইঙ্গিত নয়, বরং একেবারে সরাসরি পরিচিত কয়েকজন নেতার নাম উঠে এলো গানের কথায়। আর তাতেই শুরু হলো বিতর্কের ঢেউ—হুল্লোড়ে ভরা মিলনমেলার মাঠ থেকে তা পৌঁছে গেল রাজনৈতিক আড্ডা থেকে শুরু করে সোশ্যাল মিডিয়ার টাইমলাইনেও।
কেননা গানের স্রোতে জুড়ে গেছেন রাজ্যের পরিচিত তিনজন ‘ঘোষ’। একেকবার একজনের নাম উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে মঞ্চ জুড়ে উঠেছে উল্লাস। দর্শকদের মধ্যে কেউ কেউ তো চমকে উঠলেন, কেউ আবার হেসে খুন। কিন্তু এই নাম উচ্চারণের পর প্রতিক্রিয়াই বা কী দিলেন সেই নেতারা?
নাম উঠে এলেও রাজনীতিকরা কিন্তু তেমন রাগ দেখালেন না। বরং মজাই পেলেন কেউ কেউ।
কুণাল ঘোষ খোলাখুলি জানালেন, তাঁর একফোঁটাও খারাপ লাগেনি—এটা তিনি নিছকই হাস্যরস হিসেবে নিয়েছেন।
- শতরূপ ঘোষ আবার একেবারে খোলা মনে জানালেন, শিল্পীর স্বাধীনতাকে তিনি শ্রদ্ধা করেন। তাঁর মতে, শিল্প মানেই আয়না—সেখানে সমালোচনা বা ব্যঙ্গ থাকবেই।
- তবে দিলীপ ঘোষ-এর পক্ষ থেকে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে এতো উন্মাদনার মধ্যে প্রশ্ন উঠতেই অনির্বাণ কিন্তু স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, গান তিনি মঞ্চেই বলেছেন, তার বাইরে কোনো ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। যেন বোঝাতে চাইলেন—শিল্পীর বক্তব্য বুঝতে হলে তাঁর শিল্পকেই শুনতে হবে।
মিলনমেলার ওই সন্ধ্যা তাই হয়ে উঠল দ্বিধাবিভক্ত—একদিকে সুর আর উৎসব, অন্যদিকে রাজনীতির মশলা। তবে একটা জিনিস নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হলো: ব্যঙ্গ, রাজনীতি আর সংগীত—এই তিন মিলে যদি সঠিক হাতে মেশানো যায়, তবে মঞ্চ শুধু বিনোদনের জায়গা হয়ে থাকে না, সমাজের আয়নাও হয়ে ওঠে।