উত্তরবঙ্গের (North Bengal) পাহাড়ি জেলা দার্জিলিঙে দুর্যোগের পর এখনও স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সংগ্রাম চলছে। টানা তিন দিন আগে শুরু হওয়া অতিবৃষ্টি ও ধসে পাহাড় যেমন ক্ষতবিক্ষত হয়েছে, তেমনই নদীগুলোর ফুলে ওঠা জলে ডুয়ার্সেও তৈরি হয়েছিল ভয়াবহ পরিস্থিতি। শনিবার রাতভর বৃষ্টি হলেও রবিবার থেকে আকাশ কিছুটা পরিষ্কার হওয়ায় দুর্দশা খানিকটা কমেছে, কিন্তু ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট আর নিখোঁজ মানুষের খোঁজ না মেলায় উদ্বেগ কাটছে না।
বিভিন্ন এলাকায় ধসে বন্ধ হয়ে গেছে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার যোগাযোগ। রোহিণী রোড সাময়িক চালু হলেও সোমবার সকালে ফের তা বন্ধ হয়ে যায়। দুধিয়ায় ভেঙে পড়া সেতুর কারণে মিরিকগামী পথও আংশিকভাবে অচল হয়ে গেছে। মঙ্গলবার সেই সেতুর কাজ পরিদর্শনে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, জরুরি ভিত্তিতে একটি অস্থায়ী সেতু নির্মাণ হচ্ছে, যা ১৫-২০ দিনের মধ্যে প্রস্তুত হলে যাতায়াত অনেকটাই সহজ হবে।
এখন বিকল্প হিসেবে হিল কার্ট রোড ও পাঙ্খাবাড়ি রোড ব্যবহার করা হচ্ছে। হিল কার্ট রোড তিনধারিয়া হয়ে সুকনা ও শিলিগুড়ি পর্যন্ত চালু আছে। পাঙ্খাবাড়ি রোডও খোলা হলেও পাহাড়ি দুর্গমতার কারণে পথ কঠিন। এই দুই সড়কে ভর করেই চলছে পাহাড়-সমতলের যোগাযোগ।
প্রশাসনের হিসাবে, বৃষ্টির পরে আটকে পড়া পর্যটকদের বেশিরভাগকে নিরাপদে নামানো হয়েছে। তবুও অনেকে এখনও নিখোঁজ, যার সঠিক সংখ্যা এখনও নির্ধারণ করা যায়নি। উদ্ধার অভিযান চলছে অবিরাম। বিপর্যয়ে ইতিমধ্যেই অন্তত ২৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন। মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত নতুন কোনও দেহ উদ্ধার হয়নি।
জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ বলেছে, শিলিগুড়ির সেবক থেকে রংপো পর্যন্ত ভারী পণ্যবাহী যান চলাচল দু’দফায় বন্ধ থাকবে—মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে বুধবার মধ্যরাত এবং বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে শুক্রবার মধ্যরাত পর্যন্ত। পরিস্থিতি বিবেচনায় যাত্রীবাহী বাস চলাচলের অনুমতি নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
দুর্যোগের ধকল কাটিয়ে ধীরে ধীরে ছন্দে ফিরছে দার্জিলিঙ। মেঘ কমে এসেছে, মাঝে মাঝে মেঘের ফাঁক গলে দেখা দিচ্ছে মহিমান্বিত কাঞ্চনজঙ্ঘা—যেন পাহাড় আবার নতুন প্রাণে শ্বাস নিচ্ছে।