ভোটার তালিকায় (Voter List) আরও নির্ভুলতা আনতে নতুন পথে হাঁটছে নির্বাচন কমিশন। কেবল ফর্ম যাচাই বা তথ্য হালনাগাদ নয়, এবার গুরুত্ব পাচ্ছে এমন এক পদ্ধতি, যা গোটা প্রক্রিয়াকেই বদলে দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। কমিশনের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানাচ্ছে, আসন্ন বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) শুরু হওয়ার আগেই এই নতুন কৌশল চালু হচ্ছে।
ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে, বিষয়টি আসলে ভোটার তালিকার ম্যাপিং প্রক্রিয়া। সদ্য প্রকাশিত তালিকাকে ২০০২ সালের এসআইআরের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। যাদের নাম দুটি তালিকায় মিলবে, তাদের ক্ষেত্রে আর কোনও নথির দরকার পড়বে না—শুধুমাত্র আবেদনপত্রই যথেষ্ট। কিন্তু নাম না মেলাদের ক্ষেত্রে প্রমাণপত্র পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যেন ভুয়ো সংযোজন বা বাদ পড়ার অভিযোগ না ওঠে।
এই পুরো ব্যবস্থার ওপর নজর রাখতে আগামিকাল বুধবার থেকেই রাজ্যে দুই দিনের সফরে আসছেন জাতীয় নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধিরা। দক্ষিণবঙ্গের সব জেলার জেলাশাসক, অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন আধিকারিক, ওসি (নির্বাচন), এসডিও, ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার এবং এনআইসি প্রতিনিধিদের নিয়ে সকাল ১০টা থেকে বৈঠকে বসবেন কমিশনের ভারপ্রাপ্ত সিনিয়র উপ নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ ভারতী, তথ্যপ্রযুক্তি শাখার ডিরেক্টর জেনারেল সীমা খন্না ও রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মনোজ আগরওয়াল।
কমিশন সূত্রে খবর, বৈঠকের মধ্যে শুধু ম্যাপিং নয়, মোট আটটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হবে। তবে সূত্রের দাবি, বৈঠকের আগেই সব জেলার ম্যাপিং প্রক্রিয়া শেষ করার লক্ষ্য নিয়েছে কমিশন। তারা আরও জানান, “কোনও জেলার ম্যাপিংয়ে ত্রুটি থাকলে প্রশাসনকে জবাবদিহি করতে হবে। বিষয়টি একেবারেই হালকা নয়।” উত্তরবঙ্গের দুর্যোগ পরিস্থিতির কারণে সেই অঞ্চলের জন্য মাসের শেষে আলাদা বৈঠকের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
বুথস্তরের আধিকারিক (বিএলও) নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ নিয়েও নজর দিচ্ছে কমিশন। নিয়ম অনুযায়ী, এবার কেবল সরকারি কর্মচারীরাই বিএলও হতে পারবেন। কিন্তু কিছু জায়গায় এই নির্দেশ অমান্য হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে—এ নিয়েও নির্দেশ দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। একই সঙ্গে ভোটার ফর্ম-৬, ৭ ও ৮-এর কার্যপ্রণালীও পর্যালোচনা করবেন কমিশনের প্রতিনিধিরা।
এসআইআরের কাজের জন্য রাজ্যজুড়ে প্রায় সাত থেকে সাড়ে সাত কোটি ভোটার ফর্ম ছাপানোর প্রস্তুতি চলছে। ভোটারদের কার্ড নম্বরের সঙ্গে এবার যুক্ত হবে আধার নম্বরও। প্রয়োজনীয় উপকরণ, প্রিন্টার, কাগজ এবং প্রক্রিয়া সংক্রান্ত স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হবে জেলার আধিকারিকদের সামনে—যার মাধ্যমে নতুন ভোটার তালিকা তৈরির পথে আরও এক ধাপ এগোবে নির্বাচন কমিশন।