দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে রবিবার সন্ধ্যার আলোয় জমেছিল মহারণ। একদিকে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তান, অন্যদিকে উদ্দীপ্ত ভারত। আর সেই রোমাঞ্চকর লড়াই শেষে মায়ের বোধনের দিনেই পাকিস্তানের স্বপ্ন ভেঙে দিল ভারত। উৎসবের আবহে এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আনন্দে উচ্ছ্বাসে ভেসে গেল গোটা দেশ।
ম্যাচের শুরু
টস জিতেই ফিল্ডিং নিতে দ্বিধা করলেন না অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব। কিন্তু পরিকল্পনা সফল করতে প্রথম দিকে বেগ পেতে হলো ভারতকে। ওপেনার সাহিবজাদা ফারহান (৫৭) ও ফখর জামান (৪৬) চমৎকার ব্যাট করে পাকিস্তানের রান তোলে দ্রুত গতিতে। দশম ওভারে দলীয় সংগ্রহ পৌঁছে যায় ৮৪-তে, তখনই মনে হচ্ছিল ম্যাচের দিকটা পাক শিবিরের দিকে ঝুঁকছে।
ভারতীয় স্পিনের ঘূর্ণি
কিন্তু খেলা তখনো বাকি ছিল। ১৩তম ওভারের পর যেন হঠাৎ ঝড় বয়ে গেল পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইন-আপে। কুলদীপ যাদবের হাতে স্পিনের জাদু— মাত্র এক ওভারে তুলে নিলেন তিনটি উইকেট। শেষে তাঁর বোলিং ফিগার দাঁড়াল ৪/৩০। সঙ্গে অক্ষর প্যাটেল, বরুণ চক্রবর্তী ও বুমরাহও উইকেট তুলে পাকিস্তানকে কার্যত হাঁটু গেড়ে বসতে বাধ্য করেন। পরপর উইকেট হারিয়ে শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান থামে ১৪৬ রানে (১৯.১ ওভার)।
ব্যাট হাতে তিলকের নায়কোচিত ইনিংস
লক্ষ্য সহজ হলেও ভারতের শুরুটা ছিল দুশ্চিন্তার। অভিষেক শর্মা (৫), সূর্যকুমার (১) ও শুভমান গিল (৯) দ্রুত ফিরলে চাপে পড়ে যায় ড্রেসিংরুম। সেই মুহূর্তেই নেতৃত্ব ধরে রাখেন তরুণ তিলক ভার্মা। সঞ্জু স্যামসন (২৪) সময়ের দাবি মেনে হাত খোলার সুযোগ করে দেন, এরপর তিলককে যোগ্য সঙ্গত দেন শিবম দুবে। শীতল মাথায় পরিকল্পিত ক্রিকেট খেলে ম্যাচের দিশা ঘুরিয়ে দেন তাঁরা। তিলকের ব্যাট থেকে আসে অপরাজিত ৬৯ রান, যেখানে ছিল তিনটি চার ও চারটি ছক্কা। পাকিস্তানের বোলারদের জন্য তিনি হয়ে ওঠেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।
শেষদিকে শিবম দুবের বিদায়ের পরও ভারত নিশ্চিন্তে এগোতে থাকে লক্ষ্যের দিকে। আর শেষ ওভারের চতুর্থ বলে হারিস রউফকে বাউন্ডারি মেরে দলের জয় সিল করেন রিঙ্কু সিং। স্কোরবোর্ডে লেখা হয় ১৫০/৫ (১৯.৪ ওভার)।
উৎসবের দিনে দ্বিগুণ আনন্দ
এভাবে ৫ উইকেটে পাকিস্তানকে হারিয়ে ভারত পঞ্চমবারের মতো এশিয়া কাপের মুকুট জিতল। দুর্গাপুজোর বোধন হোক কিংবা নবরাত্রির দিন— এই জয়ের মুহূর্ত গোটা দেশকে ডুবিয়ে দিল আনন্দে। মাঠে ভারতের ক্রিকেটাররা প্রমাণ করে দিলেন, মহাদেশের মঞ্চে তাদেরই জয়ধ্বনি শোনা উচিত। আর পাকিস্তানের জন্য রইল কেবল হতাশার আঁধার ও হ্যাটট্রিক হারের লজ্জা। যেন উৎসবের রাতে ক্রিকেটের প্যান্ডেলে ভারতের হাতেই বাজল বিজয়ের ঢাক।