কলকাতার খুচরো বাজারে আবারও এক বড়সড় চমকের ইঙ্গিত মিলছে। দমদম-নাগেরবাজার এলাকা ঘিরে শুরু হয়েছে জল্পনা, কারণ সেখানকার ডায়মন্ড প্লাজা শপিং মল খুব শিগ্রই হাতবদল হতে চলেছে। কে কিনছে এই জনাকীর্ণ বিপণি কেন্দ্র—এ প্রশ্নেই সরব শহরের ব্যবসায় মহল।
জল্পনার কেন্দ্রে ডায়মন্ড প্লাজা
সূত্রে পাওয়া খবর, সম্প্রতি মল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বসেছে এক আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সংস্থার প্রতিনিধিরা। একাধিক বৈঠক হয়েছে, যার ফলশ্রুতিতে জোরদার হয়েছে জল্পনা। তবে চূড়ান্তভাবে কেউ মুখ খোলেনি। শুধু জানা গিয়েছে, একাধিক ব্র্যান্ডের দোকান থাকা প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ বর্গফুটের এই কমার্শিয়াল স্পেস হাতবদল হলে লেনদেনের অঙ্ক দাঁড়াতে পারে ৫৫০-৬০০ কোটি টাকার আশপাশে।
কারা রয়েছে পেছনে?
কলকাতার বাজারে যারা নজর রাখেন, তারা বলছেন—এই মলের সঙ্গেও জড়িয়ে আছে সেই মার্কিন বিনিয়োগকারী সংস্থা “ব্ল্যাকস্টোন”। তবে সরাসরি নয়, সংস্থাটি তাদের নিয়ন্ত্রিত ‘নেক্সাস সিলেক্ট ট্রাস্ট’-এর মাধ্যমে চুক্তি সম্পন্ন করার পথে এগোচ্ছে। শোনা যাচ্ছে, আলোচনা অনেকদূর গড়িয়েছে।
প্রসঙ্গত কয়েক মাস আগেই দক্ষিণ কলকাতার সাউথ সিটি মলটিও কিনে নিয়েছিল ব্ল্যাকস্টোন। ৩,২৫০ কোটি টাকা ব্যয় করে সাউথ সিটি প্রজেক্টস-এর হাত থেকে অধিগ্রহণ করা হয় মলটি। আরও চমকপ্রদ ব্যাপার—একই সঙ্গে শ্রীলঙ্কার কলম্বোয় ওই ডেভেলপারের একটি আবাসন প্রকল্পও কিনে নেয় তারা। সাউথ সিটির পর ডায়মন্ড প্লাজাও যদি এই মার্কিন সংস্থার হাত উঠে যায় তাহলে গোটা দেশে মোট ১৯টি শপিং মল তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
ব্ল্যাকস্টোন আসলে কারা?
বিনিয়োগের দুনিয়ায় ব্ল্যাকস্টোন নামটি নতুন নয়। ১৯৮৫ সালে পিটার পিটারসন ও স্টিফেন শোয়ার্জম্যান মাত্র চার লক্ষ ডলার মূলধন নিয়ে সংস্থা শুরু করেছিলেন। প্রথমে ছিল মার্জার ও অধিগ্রহণ পরামর্শদাতা, পরে পথ খুলে যায় প্রাইভেট ইকুইটি ও রিয়্যাল এস্টেট বিনিয়োগে। গত তিন দশকে তারা বিশ্বের বৃহত্তম বিকল্প বিনিয়োগ সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।
আজ শুধু রিয়্যাল এস্টেট নয়, ক্রেডিট, পরিকাঠামো, হেজ ফান্ড থেকে বিমা—বিভিন্ন খাতে কার্যত এক প্রভাবশালী শক্তি ব্ল্যাকস্টোন। ভারতে অফিস, হোটেল ও শপিং মলে বিনিয়োগ করেছে প্রায় ১.৭ লক্ষ কোটি টাকা।
সব মিলিয়ে ছবিটা পরিষ্কার হচ্ছে ধীরে ধীরে। সাউথ সিটি কেনার কয়েক মাসের মধ্যেই ব্ল্যাকস্টোন যদি ডায়মন্ড প্লাজার মালিকানা নেয়, তবে পূর্ব ভারতের রিটেল পরিসরে তাদের দাপট আরও দৃঢ় হবে। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা—এই বহুল আলোচিত চুক্তির চূড়ান্ত ঘোষণার।