লাদাখের (Ladakh) অন্দোলন ঘিরে উত্তেজনা দিন দিন বাড়ছেই। বুধবার সকাল থেকেই পথেঘাটে জমায়েত হয়ে আন্দোলন শুরু করেছিলেন হাজার হাজার মানুষ। দাবি—রাজ্যের মর্যাদা ফেরানো, চাকরি ও জমির সুরক্ষা। কিন্তু সেই শান্তিপূর্ণ দাবিপ্রদর্শন মুহূর্তেই অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। লেহর রাস্তায় পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ বাধে। পাথর ছোড়া, গাড়ি ভাঙচুর—শেষমেশ পরিস্থিতি এতটাই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় যে পুলিশকে কড়া ব্যবস্থা নিতে হয়।
এই গোলমালের মধ্যেই এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা সামনে আসে। আহতদের মধ্যে কয়েকজন নেপালি নাগরিক রয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে দুইজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। বাকি দু’জন চিকিৎসাধীন। প্রশাসনের মতে, এই তথ্য বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের সেই অভিযোগকে শক্তিশালী করে দিয়েছে যে “আন্দোলনের সঙ্গে বিদেশি মদত জড়িত।”
তবে এখনও পর্যন্ত মোট ৬০ জনেরও বেশি মানুষকে আটক করা হয়েছে, যদিও কিছুজনকে পরবর্তীতে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সূত্রে আরো জানানো হয়েছে, নেপালি আটক আন্দোলনকারীদের শারীরিক পরীক্ষা শেষে আদালতে তোলা হবে। ইতিমধ্যেই পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে চারজনের মৃত্যু হয়েছে এবং আহত হয়েছেন অন্তত ৭০ জন।
বিক্ষোভের কেন্দ্রে উঠে এসেছেন জলবায়ু আন্দোলনকর্মী সোনম ওয়াংচুক। কেন্দ্রের অভিযোগ করছে, ওয়াংচুক তরুণদের উসকানি দিয়ে আন্দোলনকে ভয়ঙ্কর আকারে নিয়ে গিয়েছেন। এ ছাড়াও তাঁর প্রতিষ্ঠান SECMOL-এর বিদেশি অর্থায়নের লাইসেন্সও বাতিল করেছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। অভিযোগ, তিনি উদ্দেশ্যমূলকভাবে নানা আন্তর্জাতিক উদাহরণ টেনে এনে স্থানীয়দের বিভ্রান্ত করছেন।
প্রশাসনের দাবি, আন্দোলনের নামে আইন ভাঙা এবং রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি নষ্ট করার ঘটনা কোনভাবেই সহ্য করা হবে না। তারা আরও বলেন, বিক্ষোভকারীরা শুধু সরকারি সম্পত্তি নয়, বিজেপির কার্যালয়েও আগুন ধরিয়ে দেয়। ভাঙচুর করা হয়েছে একাধিক পুলিশ ভ্যান। অভিযুক্তদের তালিকায় নাম উঠেছে কংগ্রেস কাউন্সিলার ফুন্টসগ স্ট্যানজিন সেপাগেরও। ফলে রাজনৈতিক তরজাও এখন উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।
অবস্থা সামলাতে লেহ শহরে কারফিউ জারি হয়েছে। একসঙ্গে পাঁচজনের বেশি মানুষ জড়ো হতে পারবেন না, অনুমতি ছাড়া কোনও রকম সভা-সমাবেশ করা যাবে না—প্রশাসনের এই কড়া নির্দেশেই আপাতত থেমে আছে উত্তেজনার উত্তাল ঢেউ। তবে আন্দোলনের শক্তি যে দ্রুত শেষ হয়ে যাবে, তা আপাতত মনে হচ্ছে না।
ক্রমশ বিস্তার লাভ করা এই অস্থিরতা লাদাখের রাজনৈতিক আবহকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। বিদেশি প্রভাবের অভিযোগে উত্তপ্ত রাজনীতির পাশাপাশি স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের দাবি–রাজ্যের মর্যাদা ফেরানো—আন্দোলনের মূল বিষয় হিসেবে আরও জোরদার হয়ে উঠছে।