ঝাড়খণ্ড ও ছত্তিশগড়ে একই দিনে মাওবাদী দমনে নিরাপত্তা বাহিনী দুটি বড় সাফল্য অর্জন করেছে। ভোরের অন্ধকারে গুমলার জঙ্গলে পুলিশ অভিযানে ঘটে যায় উত্তেজনাপূর্ণ ঘটনা। অন্যদিকে দান্তেওয়াড়া জেলায় পুলিশের সামনে আত্মসমর্পণ করে বহুদিনের মাথাব্যথা হয়ে থাকা মাওবাদীদের একাংশ। এই দুই ঘটনার ফলে মাওবাদী দমনের কৌশলে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।
বুধবার ভোরে ঝাড়খণ্ডের গুমলা জেলার কেচকী গ্রামের ঘন জঙ্গলে পুলিশের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিন মাওবাদী নিহত হয়। পরে জানা যায়, নিহতদের একজন কুখ্যাত নেতা মার্টিন কেরকেটা, যার মাথার দাম ছিল ১৫ লক্ষ টাকা। দীর্ঘদিন ধরে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য সে ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। ঘটনাস্থল থেকে তিনটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে এবং পুরো বনাঞ্চলে এখনো তল্লাশি অব্যাহত রয়েছে।
এদিনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে ছত্তিশগড়ের দান্তেওয়াড়ায়। সেখানে একযোগে ৭১ জন মাওবাদী আত্মসমর্পণ করে। সেই তালিকায় রয়েছে ১৭ জন পুরুষ, ২১ জন নারী ও সাথে দুই নাবালিকা। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, এই আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধেই ছিল বড় পুরস্কার ঘোষণা, যার মোট অঙ্ক দাঁড়ায় প্রায় ৬৪ লক্ষ টাকা। দান্তেওয়াড়ার পুলিশ সুপার গৌরব রাই জানান, মাওবাদীরা তাদের বিভ্রান্তিকর মতাদর্শে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে এবং সরকারের পুনর্বাসন প্যাকেজের প্রতি আস্থা রেখেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
নিরাপত্তা বাহিনীর টানা অভিযানের পাশাপাশি সরকারের পুনর্বাসন নীতি এ অঞ্চলে নতুন মোড় এনে দিয়েছে। একদিকে সশস্ত্র লড়াইয়ে বড় মাওবাদী নেতার পতন, অন্যদিকে স্বেচ্ছায় আন্দোলন থেকে সরে আসা বহু কর্মী—এই দুই ঘটনাই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বহু বছরের সশস্ত্র বিদ্রোহকে দুর্বল করার বড় পদক্ষেপ হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে।
বর্তমানে ঝাড়খণ্ড ও ছত্তিশগড় দুই রাজ্যেই অভিযান অব্যাহত রয়েছে। প্রশাসনের দাবি, এই ধারাবাহিকতায় মাওবাদী প্রভাব ক্রমশ ক্ষীণ হবে এবং স্থানীয় মানুষের মধ্যে শান্তি ও নিরাপত্তার পরিবেশ গড়ে উঠবে। সাম্প্রতিক সাফল্যগুলো তাই বিদ্রোহ দমনের পাশাপাশি উন্নয়নের পথ প্রশস্ত করবে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্ট মহল।