লেহ শহরের (Leh City) বুধবার যেন অন্য সব দিনের থেকে আলাদা ছিল। সকালে শান্তিপূর্ণ ভঙ্গিতে শুরু হওয়া দাবি-দাওয়ার মিছিল মুহূর্তেই এক সময় এসে রূপ নেয় অশান্তিতে। রাস্তার মোড় ঘিরে মানুষের স্লোগান, হাতে ব্যানার—সব যেন বলছিল বহু বছরের ক্ষোভের কথা। কিন্তু দিন গড়ানোর মাঝপথেই উত্তেজনার আবহ ঘন হতে শুরু করে, আর ঠিক সেই সেখান থেকেই আন্দোলন হিংসাক্তক হয়ে ওঠে।
উত্তেজনায় থমথমে লেহ
Leh Apex Body-র ডাকা বনধ ঘিরে ফাঁকা হয়নি শহর, বরং রাস্তাভর্তি হয়ে উঠেছিল হাজারো মানুষের ঢল। শুরুতে দাবির সুর ছিল তীব্র অথচ নিয়ন্ত্রিত। কিন্তু কিছু সময়ের মধ্যে পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা, বিজেপির কার্যালয় ঘেরাও আর তারপরেই শুরু হয় ধস্তাধস্তি। পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশ লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে। জবাবে ইঁটবৃষ্টি, ভাঙচুর, এমনকি পুলিশের গাড়িতেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
মৃত্যু আর আতঙ্ক
এই উত্তপ্ত সংঘর্ষ প্রাণ কেড়ে নিয়েছে অন্তত চার জনের। আহত হয়েছেন প্রায় ৭০ জন, যাঁদের কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। দ্রুতই প্রশাসন শহর জুড়ে কার্ফু জারি করে দেয় এবং পাঁচ জনের বেশি মানুষের জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়।
যুবসমাজের ক্ষোভ
Leh Apex Body-র ডাকা এই প্রতিবাদ আসলে লাদাখের পুরনো দাবি ঘিরেই। রাজ্যের স্বীকৃতি, চাকরির ক্ষেত্রে সুরক্ষা ও ষষ্ঠ তফসিলের অন্তর্ভুক্তি—এই দাবিতে পাঁচ বছর ধরে বারবার দাবি তুলেছেন স্থানীয়রা। কিন্তু আশ্বাস ছাড়া কোনও রাজনৈতিক পদক্ষেপ না আসায় ক্ষোভ জমছিলই। বুধবার সেই ক্ষোভ বিস্ফোরিত হয়ে পড়ে রাস্তায়।
সোনম ওয়াংচুকের আহ্বান
এদিকে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলেও, ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় জলবায়ু কর্মী সোনম ওয়াংচুক এদিন প্রতিবাদকারীদের শান্ত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বর্তমানে অনশনে আছেন এবং সামাজিক মাধ্যমে বলেছেন, “এটা যুবসমাজের ক্ষোভ—কেউ এটাকে Gen Z-এর বিপ্লবও বলছে। কিন্তু হিংসা কোনও সমাধান আনবে না। আমাদের লড়াই সফল করতে হলে তা শান্তিপূর্ণ পথেই চালাতে হবে।”
পটভূমি থেকে বর্তমান
২০১৯ সালে অনুচ্ছেদ ৩৭০ বিলোপের পর আলাদা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হয়ে ওঠে লাদাখ। তবে সেই সময় সরকারি তরফে রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হলেও ছয় বছর কেটে গেছে—এখনও মেলেনি সেই স্বীকৃতি। হতাশা জমেই পথের উপর নেমে এসেছে মানুষের ক্ষোভ, রক্তাক্ত হয়ে উঠেছে প্রতিবাদের ভাষা।
কোথায় গিয়ে থামবে এই আন্দোলন, তার উত্তর কেউ জানে না। তবে বুধবার লেহ শহরে যে রক্তাক্ত দাগ রেখে গেল, তা সহজে মিলিয়ে যাবে না। লাদাখের আন্দোলনের ইতিহাসে এই দিন দীর্ঘদিন ধরে থেকে যাবে এক দগদগে স্মৃতি হয়ে।