প্রাথমিক শিক্ষকদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বড়সড় মোড় আনল দেশের শীর্ষ আদালত। গত ১ সেপ্টেম্বরের এক রায়ে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিয়েছে, প্রাইমারি স্কুলের চাকরিতে টিকে থাকতে গেলে এবার আর শুধু পুরনো অভিজ্ঞতা যথেষ্ট নয়—টিচার্স এলিজিবিলিটি টেস্ট (TET) পাস করাও বাধ্যতামূলক। এই নির্দেশ কার্যকর হলে এক বড় অংশের শিক্ষককে আগামী দিনে পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে।
সুপ্রিম কোর্টের রায়
শীর্ষ আদালতের প্রধান বক্তব্য—যাঁদের চাকরির মেয়াদ ৫ বছরের বেশি, তাঁদের অবশ্যই টেট পাস করতে হবে। তা না হলে পদ খোয়াতে হবে। অন্যদিকে, যাঁদের চাকরির অভিজ্ঞতা এখনো ৫ বছরের কম, তাঁরা আপাতত টেট ছাড়াই কাজে যেতে পারবেন বটে, তবে পদোন্নতির ক্ষেত্রে বাধা এড়াতে হলে এই পরীক্ষায় পাশ করতেই হবে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, যাঁরা টেট না পাস করার কারণে চাকরি হারাবেন, তাঁদের অবসরের সুযোগ–সুবিধা অক্ষুণ্ণ থাকবে।
নির্দেশ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া
মহারাষ্ট্রের একটি মামলায় বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত ও বিচারপতি মনমোহনের বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন। যেহেতু রায়টি জাতীয় স্তরে কার্যকর, তাই পশ্চিমবঙ্গ-সহ প্রতিটি রাজ্যেই এ নিয়ম বেঁধে দিতে হবে। এরই প্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ থেকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদগুলিকে ইতিমধ্যেই জরুরি চিঠি পাঠানো হয়েছে। সেখানে স্পষ্ট নির্দেশ, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিটি শিক্ষকের জন্মতারিখ, যোগদানের দিন, চাকরির মেয়াদ, অবসরের সময়সীমা এবং শিক্ষাগত যোগ্যতার পূর্ণ তালিকা জমা দিতে হবে। উদ্দেশ্য একটাই—কোন শিক্ষক টেট পাস করেছেন আর কারা এখনো করেননি, তার হালনাগাদ নথি হাতে পাওয়া।
কেন গুরুত্বপূর্ণ
২০০৯ সালে শিক্ষা অধিকার আইন কার্যকর হওয়ার পর থেকে দেশে পরিষ্কার নিয়ম, শিক্ষক পদে যোগ্যতার মাপকাঠি হল টেট। বাংলায় এই পরীক্ষা চালু হয় ২০১২ সালে। তার আগে প্রায় পঞ্চাশ হাজার শিক্ষক টেট ছাড়াই প্রাথমিক স্কুলে চাকরি পান। বর্তমানে রাজ্যে দেড় লাখের বেশি প্রাথমিক শিক্ষক রয়েছেন, যাঁদের বড় অংশই এখনও টেট পরীক্ষায় বসেননি।
সামনে কী
সব মিলিয়ে পরিষ্কার—আগামী দুই বছরের মধ্যে রাজ্যের অজস্র শিক্ষককে টেট পাশ করতেই হবে। নইলে চাকরি টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে উঠবে। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের এই নির্দেশ শিক্ষাক্ষেত্রে এক বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে, যার প্রভাব পড়বে সরাসরি প্রাথমিক শ্রেণির শ্রেণিকক্ষ থেকে শুরু করে গোটা শিক্ষা ব্যবস্থার ভবিষ্যতে।