কলকাতাবাসীর আনন্দের উৎসব শুরু হতে আর ক’দিন বাকি। চারদিকে আলো, সাজসজ্জা, চলবে প্যান্ডেল হপিংয়ের হিড়িক। আর সেই ভিড় সামলাতে শহরের মেট্রো অথরিটি এবার নামছে নতুন রূপে। একসঙ্গে পাঁচটি রুটে চালু হবে ট্রেন, সঙ্গে থাকছে বিশেষ স্মার্ট কার্ড—যেখানে মিলবে সীমাহীন ভ্রমণের সুবিধা। তবে এত কিছু আয়োজনের মাঝেই যাত্রীদের মনে প্রশ্ন—পরিষেবা কি উৎসবের ভিড়ে সত্যিই ভরসা রাখতে পারবে?
নতুন রেকর্ডের পথে
দেশের প্রথম মেট্রো চালু হয়েছিল এই কলকাতাতেই। তার পর থেকে বহু পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু এবারের দুর্গাপুজোয় শহর ভাঙছে নিজস্ব রেকর্ড—প্রথমবারের মতো পাঁচটি রুটে একযোগে মেট্রো চলবে। চলাচল করবে শহিদ ক্ষুদিরাম থেকে দক্ষিণেশ্বর, হাওড়া ময়দান থেকে সল্টলেক সেক্টর ফাইভ, জোকা থেকে মাঝেরহাট, কবি সুভাষ থেকে বেলেঘাটা, আর নোয়াপাড়া থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত। গত ২২ আগস্ট উদ্বোধন হওয়া নতুন করিডরগুলিই এই তালিকায় যুক্ত করেছে বাড়তি গতি।
সীমাহীন ভ্রমণের কার্ড
শুধু রুট বাড়ানোই নয়, এবার যাত্রীদের টানতে মেট্রো কর্তৃপক্ষ আনছে বিশেষ অফার। চালু হচ্ছে স্পেশাল স্মার্ট কার্ড—
তিন দিনের জন্য ২৫০ টাকা
পাঁচ দিনের জন্য ৫৫০ টাকা
হিসেব বলছে, এর ফলে প্রতিদিন ব্যয় পড়বে প্রায় ৮৩ বা ১১০ টাকা। যারা পুজোর দিনগুলোয় একাধিক জায়গায় ঘুরবেন, তাদের জন্য যথেষ্ট সাশ্রয়ী এই ব্যবস্থা। উপরন্তু, স্টেশনে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ানো এড়ানো যাবে, ফলে দ্রুত এন্ট্রি ও এক্সিট সম্ভব হবে। কর্তৃপক্ষের আশা, বিদেশি পর্যটক থেকে শুরু করে স্থানীয় দর্শনার্থী—সবার কাছেই এই কার্ড ভরসার হাতিয়ার হবে।
অস্বস্তির ছায়া
তবে সব আয়োজনের মাঝেই কিছু আশঙ্কাও পিছু ছাড়ছে না। কয়েক সপ্তাহ ধরেই নর্থ–সাউথ মেট্রোর সমস্যায় পড়তে হচ্ছে, কবি সুভাষ স্টেশন ২৮ জুলাই থেকে বন্ধ। হাওড়া–সল্টলেক করিডরেও বারবার দেখা দিয়েছে বিঘ্ন। কর্মীর অভাব নিয়ে অভিযোগও উঠেছে জোরালো। ফলে যাত্রীদের মধ্যে প্রশ্ন জেগেছে—কার্ড কিনে ভরসা রাখার পরও যদি মাঝপথে পরিষেবা আটকে যায়, তবে উৎসবের আনন্দই মাটি হবে না তো?
বড় পরীক্ষার সামনে
এই প্রথম অফুরন্ত যাত্রার প্রতিশ্রুতি দিল শহরের প্রাণপ্রবাহ মেট্রো। তা কি সত্যিই সার্থক হবে? না কি বারবার ভোগান্তির ছাপেই ঢাকা পড়বে আয়োজনের উজ্জ্বলতা? দুর্গাপুজোর জনস্রোতই এবার তার বড় পরীক্ষা। ওই ভিড় সামলাতে কতটা সফল হবে এই পরিবেশবান্ধব যাতায়াত, সেটাই এখন কলকাতার কৌতূহল।