দেশজুড়ে এখন বাজারের হিসেব কষা যেন সাধারণ মানুষের কাছে নিত্যকার যুদ্ধ। সংসারের খরচ মেলাতে গিয়ে অনেকেই প্রথমেই কাটছাঁট করছেন খাবারের বাজেটে। শহর হোক বা গ্রাম, খাবারের তালিকায় সঙ্কোচন যেন আজ এক অভিন্ন বাস্তব চিত্র।
খরচে দৃশ্যমান পরিবর্তন
সরকারি সমীক্ষা জানাচ্ছে, কয়েক বছরের ব্যবধানেই খাদ্য ব্যয়ে বড় ধরনের রদবদল দেখা দিয়েছে। ২০১২ সালে যেখানে গ্রামের পরিবারগুলির অর্ধেকের বেশি মাসিক ব্যয় যেত খাবারের পেছনে, এখন সেই অনুপাত নেমেছে ৪৭ শতাংশে। শহরের ছবিটা আরও কড়া— সেখানে গড়ে ছ’জনের মধ্যে মাত্র দু’জন পরিবার আয়-এর ৪০ শতাংশের মতো অংশ রাখছেন খাবারের জন্য। বাকি অংশ চলে যাচ্ছে ভাড়া, পড়াশোনা, চিকিৎসা, ই এম আই ও অন্যান্য খাতে।
মূল কারণ মূল্যবৃদ্ধি
কেন এই প্রবণতা? মূল রহস্য মূল্যবৃদ্ধি। রান্নার জরুরি উপাদানগুলো যেমন চাল-ডাল থেকে তেল, ডিম কিংবা সবজি—সবকিছুর দাম গত এক দশকে বেড়েছে লাগামছাড়া। ফলে মানুষ এখন আর ইচ্ছেমতো কিনতে পারছেন না। শুধু খোলা বাজার নয়, প্যাকেটজাত খাবারও আজ অনেকের নাগালের বাইরে। খরচ বাঁচানোর তাগিদ এত প্রবল যে স্বাস্থ্যকর খাওয়ার চেয়ে পেট ভরানোই বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।
পরিসংখ্যান বনাম বাস্তবতা
সরকারি তথ্য অবশ্য অন্য পরিসংখ্যা দেখাচ্ছে। সংখ্যা বলছে, দেশজুড়ে সম্প্রতি খাদ্যদ্রব্যের দামে কিছুটা স্বস্তি এসেছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কও জানিয়েছে আগস্টে মুদ্রাস্ফীতির চাপ সামান্য হালকা হয়েছে। কিন্তু নিত্য বাজারের থলি ভরতে গেলেই সেই আশ্বাস ম্লান হয়ে যায়। অনেকের সংসার চালানো এখনো দুঃসাধ্য হয়ে উঠছে। বিশেষত মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের।
সামনে পরিবর্তনের পরিকল্পনা
এই প্রেক্ষাপটেই অর্থমন্ত্রক ঘোষণা করেছে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের। আগামী এপ্রিল থেকে কেন্দ্র জিডিপি বৃদ্ধিহারের ভিত্তিবছর বদল করতে চলেছে। এতদিন ২০১১-১২ অর্থবর্ষে ভর করে তৈরি হতো হিসাব, এবার সেই জায়গায় আসবে ২০২২-২৩। শুধু তাই নয়, খুচরো মূল্যসূচক তৈরির বর্তমান পদ্ধতিতেও আসছে পরিবর্তন। যেখানে এতদিন প্রায় ৩০০ পণ্যকে ভিত্তি ধরা হতো, এবার সেই ঝুড়ি বাড়বে ৪০০-রও বেশি পণ্যে। আর খাদ্যের প্রভাব সূচকে সামান্য করা হবে ইচ্ছাকৃতভাবেই।
রান্নাঘরের অঙ্কই আসল পরিমাপ
এই গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের ফলে সরকারের ধারণা—এতে খাবারের দামের ওঠানামা সরাসরি সামগ্রিক মুদ্রাস্ফীতিতে প্রভাব ফেলবে না। তবে পরিসংখ্যান গড়ার টেবিলের অঙ্ক আর ঘরের বাজার ফেরত থলির অঙ্ক এক নয়। বাস্তবে খাবারের দাম কমছে না বলেই রান্নাঘরের টানাপড়েন প্রতিটি বাড়ির নীরব ভাষ্যে স্পষ্ট।