ভোটার তালিকা নিয়ে নির্বাচন কমিশন যে এবার একেবারে নিজেদের ঘর গোছাতে নেমেছে, তা নিয়ে প্রশাসনিক মহলে ইতিমধ্যেই গুঞ্জন শুরু হয়েছে। উৎসবের আবহ মিটতেই হাতে নেওয়া হচ্ছে এক বিশেষ পদক্ষেপ, যার মাধ্যমে ধরা পড়তে পারে বহু বছরের জমে থাকা অসঙ্গতি। এই উদ্যোগের মধ্যে কী কী থাকছে, তা ইতিমধ্যেই জেলা প্রশাসন পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। উদ্দেশ্য একটাই—ভোটার তালিকাকে আরও নির্ভুল ও আপডেট রাখা।
ভোটার তালিকা মিলিয়ে দেখার নির্দেশ
চলতি মাসের শুরুতেই দিল্লিতে মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকদের নিয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়। সেখানেই কমিশন স্পষ্ট জানায়, পুরনো ২০০২ সালের তালিকা এবং ২০২৫ সালের বর্তমান চূড়ান্ত ভোটার তালিকাকে পাশাপাশি বসিয়ে পরীক্ষা করতে হবে। প্রতিটি বুথ লেভেল অফিসারের হাতে তুলে দেওয়া হবে দুই কপিই। এরপর শুরু হবে নাম–ঠিকানা খুঁটিয়ে দেখা, বুথ নম্বর থেকে শুরু করে সিরিয়াল নম্বর, সব কিছু কাগজে-কলমে লিখে রাখার কাজ।
বিশেষ নজরদারি ও রিপোর্টিং
এখানেই শেষ নয়। প্রক্রিয়ার প্রতিটি স্তরেই থাকছে নজরদারি। অফিসারদের কাজ সরাসরি পর্যবেক্ষণ করবেন BLO সুপারভাইজার, AERO এবং ERO। প্রতিদিন নির্দিষ্ট ফরম্যাটে অগ্রগতির রিপোর্ট জমা দিতেই হবে। ১২ সেপ্টেম্বর থেকে সেই তথ্য আপলোড হবে সিইও-র পোর্টালে। এমনকি, ১৮ ও ১৯ সেপ্টেম্বর কমিশনের এক ডেপুটি নির্বাচন কমিশনার সরেজমিন পরিদর্শনেও নামবেন।
রাজনৈতিক মহলের প্রতিক্রিয়া
শুধু ভোটারের নাম মেলানো নয়, পরিবারের সদস্যদের তথ্য নিয়েও নথিভুক্ত করে রাখতে হবে। কারও বাবা-মায়ের নাম পুরনো তালিকায় থাকলেও তার সন্তানের নাম যদি সেই তালিকায় না থাকে, তাহলে সেসব তথ্যও গচ্ছিত করতে হবে আলাদাভাবে। সব মিলিয়ে কাজটি বিশাল, তাই রাখা হয়েছে বিশেষ প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা। পশ্চিমবঙ্গের অতিরিক্ত মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক দিব্যেন্দু দাস ইতিমধ্যেই জেলা প্রশাসনকে লিখিত নির্দেশ পাঠিয়েছেন যাতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সব কাজ শেষ হয়।
রাজনৈতিক মহলের মতে, নির্বাচন কমিশনের এই পদক্ষেপ নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য করবে। আবার অন্যরা মনে করছেন, এই নজরদারি বিজেপি-তৃণমূলের রাজনৈতিক পাল্টাপাল্টি অভিযোগের প্রেক্ষিতেই প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। শেষ পর্যন্ত এই উদ্যোগ কতটা কার্যকর প্রমাণিত হয়, তা জানতে রাজনৈতিক মহল থেকে সাধারণ ভোটারকে চোখ রাখতে হবে ২০ সেপ্টেম্বরের সময়সীমার দিকে।