দেশজুড়ে রেশন কার্ড ঘিরে নতুন এক বাস্তবতা তৈরি হচ্ছে। সরকারের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তে স্পষ্ট, এবার থেকে করদাতাদের জন্য রেশনের দরজা কার্যত বন্ধ হতে চলেছে। বহুদিন ধরেই নানা মহলে প্রশ্ন উঠছিল—যাঁরা অর্থনৈতিকভাবে সক্ষম, কর দিচ্ছেন, গাড়ি বা সম্পত্তির মালিক, তাঁদের জন্য আর গরিবের রেশনের ভাঁড়ার খোলা উচিত কি না। এবার সেই দ্বন্দ্বে সরাসরি পদক্ষেপ করল কেন্দ্র।
কর-দাতা মানেই রেশন বন্ধ
কেন্দ্রীয় খাদ্য ও গণবণ্টন মন্ত্রকের নির্দেশ অনুযায়ী, যারা নিয়মিত আয়কর দেন অথবা আর্থিকভাবে সচ্ছল, তাঁরা আর কোনওভাবেই সরকারি রেশন সুবিধার তালিকায় থাকবেন না। ইতিমধ্যেই আয়কর দপ্তর ও সেন্ট্রাল বোর্ড অব ডিরেক্ট ট্যাক্সেস (CBDT)-এর তথ্য মিলিয়ে দেশজুড়ে করদাতাদের নামে থাকা প্রায় ১ কোটি ১৭ লক্ষ রেশন কার্ড চিহ্নিত হয়েছে। ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এই কার্ড বাতিলের প্রক্রিয়া শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
করদাতা অথচ রেশন সুবিধাভোগী
অভ্যন্তরীণ পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, শুধু করদাতারাই নন—অনেকে আবার গাড়ির মালিক, সংস্থার মালিক, তবুও তাঁরা রেশন সুবিধা নিচ্ছেন। তথ্য বলছে, প্রায় ৯৫ লক্ষ মানুষ একই সঙ্গে করও দিচ্ছেন আবার সস্তা বা বিনামূল্যের খাদ্যশস্যও নিচ্ছেন। পরিবহণ মন্ত্রকের মতে, অন্তত ১৭ লক্ষ রেশন কার্ডধারীর নামে রয়েছে এক বা একাধিক গাড়ি। কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রকের খতিয়ানে দেখা গেছে, ৫ লক্ষাধিক কার্ডধারী ব্যবসায়িক সংস্থার মালিক। তবুও তাঁরা প্রতিমাসে খাদ্য সুরক্ষা আইনের আওতায় রেশন সংগ্রহ করছেন।
সরকারের দাবি ও সতর্কবার্তা
সরকার স্পষ্ট জানাচ্ছে, খাদ্য সুরক্ষা আইন তৈরি হয়েছিল শুধুমাত্র অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য। করদাতা, উচ্চপদস্থ কর্মী, জমি-বাড়ির মালিক বা পর্যাপ্ত ব্যাংক ব্যালান্সধারীরা যখন রেশন সুবিধা ভোগ করেন, তখন প্রকৃত গরিব মানুষের ভাগ কমে যায়। তাই এখন থেকে অবৈধ কার্ডধারীদের চিহ্নিত করে বাতিল করা হবে। ফলে এবার সমস্ত রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, করদাতা বা অনুপযুক্ত ব্যক্তিরা যেন নিজেরাই রেশন কার্ড স্বেচ্ছায় জমা দেন। অন্যথায় জরিমানার আশঙ্কা রয়েছে।
শহরগুলোর চিত্র চোখে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছে
পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ, তার উদাহরণ দিল্লি। সেখানেই করদাতা ও উচ্চবিত্তদের নামে ধরা পড়েছে প্রায় ৬ লক্ষ ৭২ হাজার রেশন কার্ড। অনেকেরই রয়েছে নিজস্ব সংস্থা বা একাধিক সম্পত্তি। যদিও সবাই কর দেননি। তবুও যারা কর দিচ্ছে তারা সরকারি খাদ্য ভাণ্ডার থেকে সস্তায় খাদ্যশস্য তুলেছেন বছরের পর বছর। এবার সেই চর্চার অবসান ঘটাতে চাইছে সরকার।
আসল উদ্দেশ্য
গত অর্থবর্ষে দেশে কর রিটার্ন জমা পড়েছে প্রায় সাড়ে ১০ কোটির বেশি। সে সব রেকর্ড খতিয়ে দেখে একে একে রেশন কার্ডের তালিকা হালনাগাদ করা হচ্ছে। খাদ্যমন্ত্রকের দাবি, এই প্রক্রিয়ার ফলে প্রকৃত অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল পরিবারগুলিই ভবিষ্যতে সুরক্ষা পাবেন। সরকারের বার্তা তাই একেবারে স্পষ্ট—গরিবের রেশন গরিবের কাছেই যাবে, রেশনের লাইনে ধনী বা করদাতার জায়গা নেই।