কলকাতার সাংস্কৃতিক পরিসরে আবারও তোলপাড়। এবার চর্চার কেন্দ্রে অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্য। রবিবার তাঁর ব্যান্ড ‘হুলি গান ইজ়ম’-এর একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই ঝড় ওঠে। আরসেই আগুনে এবার ঘি ঢেলেছেন অভিনেতা তথা বিজেপি নেতা রুদ্রনীল ঘোষ।
বিতর্কের সূচনা
লাইভ শো চলাকালীন অনির্বাণ মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলেন— “সনাতন এসে গেছে… আর সনাতনী? …সনাতন ভারতে পৌঁছাতে হলে আমাদের পিছিয়ে যেতে হবে।” এই মন্তব্য ঘিরেই বিতর্ক। কারও কাছে এটি এক ধরনের ব্যঙ্গাত্মক শিল্প প্রকাশ, আবার কারও কাছে সরাসরি ধর্মকে হেয় করা।
রুদ্রনীলের কড়া প্রতিক্রিয়া
এই মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করে ফেসবুকে রুদ্রনীল ঘোষ লেখেন, “বন্ধুবর অনির্বাণ ভট্টাচার্য, আপনার বক্তব্য সম্পূর্ণ জ্ঞানহীন। সনাতন ধর্ম পৃথিবীর আদি ধর্ম। সেটিকে ‘এসে গেছে’ বলে অভিহিত করা চরম ভুল।” শুধু সমালোচনায় থেমে থাকেননি তিনি, অনির্বাণকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে বলেছেন।
শুধু তাই নয়—রুদ্রনীল শুধু ধর্ম প্রসঙ্গে নয়, অনির্বাণের নীরবতাকেও প্রশ্ন করেছেন। তাঁর কথায়— টলিউড মাফিয়ার কারণে কাজ হারানো বা দুর্নীতি ও চিকিৎসক হত্যা বা শিক্ষা দুর্নীতির মতো ঘটনায় তিনি নীরব থেকেছেন অথচ নিজের ধর্মকেই তির্যকভাবে আঘাত করেছেন কেন?
পেছনের প্রেক্ষাপট
উল্লেখ্য, অনির্বাণ ও তাঁর ব্যান্ড ইতিমধ্যেই বেশ কিছু রাজনৈতিক ও সামাজিক ইঙ্গিতপূর্ণ গান গেয়ে আলোচনায় এসেছে। সম্প্রতি ‘তিন ঘোষ’— কুণাল, দিলীপ ও শতরূপ ঘোষকে ঘিরে তাঁদের ব্যঙ্গাত্মক গানের লাইনও ভাইরাল হয়েছিল। সেখানে কুণাল ঘোষ ও শতরূপ ঘোষ বিষয়টি ‘শিল্পীর স্বাধীনতা’ বলে মেনে নিলেও, দিলীপ ঘোষ নীরব ছিলেন। এবার সেই ধারাবাহিকতায় ধর্ম প্রসঙ্গে টানা মন্তব্যই বিতর্ককে অন্য মাত্রা দিয়েছে।
নেটদুনিয়ার প্রতিক্রিয়া
সব মিলিয়ে নেটদুনিয়ার প্রতিক্রিয়া একদিকে প্রশংসা, অন্যদিকে বয়কটের ডাক। অনেকে লিখেছেন—“অন্যান্য ধর্ম নিয়ে একই কথা বললে বুঝতে পারতেন।” আবার কেউ কেউ বলেছেন—“বামঘেঁষা আঁতেলেরা সমাজনীতি বোঝার আগেই প্রাচীন শাস্ত্র পড়ুক।”
তবে এখনও পর্যন্ত অনির্বাণ ভট্টাচার্য নিজে নীরব। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় থামার লক্ষণ নেই। সৃজনশীল স্বাধীনতা না ধর্মীয় অনুভূতি আঘাত—দু’য়ের দ্বন্দ্বই সামনে এনে দিল এই বিতর্ক।
এখন প্রশ্ন একটাই—অনির্বাণ কি রুদ্রনীলের দাবির মতো প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইবেন, নাকি শিল্পীর অধিকারেই নিজের বক্তব্যে অনড় থাকবেন? সময়ই তার জবাব দেবে।