কলকাতার (Kolkata) হৃদয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বউবাজার, আজও প্রশ্ন তোলে—কবে নিজের ঘরে ফিরবেন সেই সব পরিবার, যাঁদের জীবন বদলে দিয়েছে মেট্রোর কাজ? ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর মধ্য দিয়ে শহর পেল নতুন সংযোগের উপহার, কিন্তু তার বিনিময়ে বহু মানুষ হারালেন ছাদের নিরাপত্তা। ছয়টা বছর কেটে গেলেও যাঁরা নিজেদের বাড়ি হারিয়েছিলেন, তাঁরা এখনও ঠাঁই পাননি নিজের চৌকাঠে। এই ক্ষোভ-অসন্তোষ এখন এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, মেট্রোর উদ্বোধনের দিনই রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
সেই পরিস্থিতির প্রেক্ষিতেই সোমবার কলকাতা পুরসভার দফতরে আয়োজিত বৈঠকে হাজির ছিলেন কলকাতা মেট্রো রেলওয়ে কর্পোরেশন লিমিটেড (কেএমআরসিএল)-এর কর্তারা, মেয়র ফিরহাদ হাকিম, পুরসভার প্রতিনিধি এবং ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকটি পরিবার। সেখানে কেএমআরসিএল জানায়, তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী পুরো কাজ শেষ করতে অক্টোবর ২০২৭ পর্যন্ত সময় লাগবে। কিন্তু এই প্রস্তাব শুনে কার্যত ক্ষোভ উগরে দেন মেয়র। তিনি এই প্রস্তাব কার্যত বাতিল করে দিয়ে স্পষ্ট নির্দেশ দেন—যেভাবেই হোক না কেন, ২০২৬ সালের পুজোর আগেই বাড়ি তৈরির শেষ করতে হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সাল থেকে মেট্রো টানেলের কারণে মোট চারবার ভয়াবহ দুর্ঘটনায় ধসে পড়েছে ২৪টি পুরনো বাড়ি। তার মধ্যে ২১টি নিজের ভারে হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে, আর তিনটি বাড়ি সম্পূর্ণ ভাঙা হয় নিরাপত্তার প্রয়োজনে। অধিকাংশই বাড়িই পুরোনো ও বহুতলযুক্ত। এখনকার মানুষজনেরা কেউ কেউ চার প্রজন্ম ধরে বসবাস করতেন। পাশাপাশি, আরও অন্তত ১৩ টি বাড়িতে বড় ধরনের ফাটল ধরা পড়েছে। এই পরিবারগুলো আজও ভাড়া বাড়িতে দিন কাটাচ্ছেন, কেউ বা আত্মীয়ের আশ্রয়ে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, কেএমআরসিএল কোনও বহুতল অ্যাপার্টমেন্ট করবে না , তৈরি হবে একেবারে প্রাচীন কাঠামোর অনুরূপ বাসস্থান, যাতে মানুষ নিজের ঘরে থাকার স্বাদ ফিরে পায়। মোট ২৪টি নতুন বাড়ি বানাতে খরচ হবে প্রায় ২৭ কোটি টাকা, আর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত ১৫টি বাড়ি সংস্কারের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৬ কোটি টাকা। মোট ৭৪টি পরিবার নতুন করে ছাদ পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এছাড়া আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয়েছে—আগামী দশ বছর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ নজর রাখবে ওই এলাকার প্রতিটি বাড়ির উপরে।মেট্রোর কম্পনে যদি ভবিষ্যতে আবার কোনও ক্ষতি হয়, সঙ্গে সঙ্গে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেবেন পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য।
বৈঠকের শেষে মেয়র আশাবাদী ভঙ্গিতে জানান, যদি সব কিছু পরিকল্পনামাফিক চলে তাহলে আগামী ৯ মাসের মধ্যে কাজের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি চোখে পড়বে। এখন প্রশ্ন একটাই—আসন্ন ২০২৬-এর পুজোর আগেই কি সত্যিই বউবাজারের গৃহহারা মানুষজন নিজেদের বাড়িতে ফিরতে পারবেন? শহরের নজর আপাতত সেদিকেই।