কলকাতার শিক্ষাঙ্গনে এখন সবচেয়ে বড় আলোচ্য বিষয় প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের (Presidency University) নতুন পদক্ষেপ। এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান ফের নিজেদের দায়িত্বে নিতে চলেছে স্নাতকোত্তর স্তরের ভর্তি প্রক্রিয়ার। ফলে কলেজ স্ট্রিটের বইপাড়া হোক কিংবা পার্কের আড্ডা—ছাত্রছাত্রীদের আলাপচারিতায় উঠে আসছে এই সিদ্ধান্তই। শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা, এবার আর দেরি নয়; নির্ধারিত সময়েই শুরু হবে নতুন সেশন।
প্রেসিডেন্সির স্পষ্ট অভিমত—সময় নষ্ট আর চলবে না। নির্ধারিত ক্যালেন্ডার যেন ঠিকঠাক মেনে চলা যায়, সেটাই এখন প্রধান লক্ষ্য। ২০১৫ সালে থেকে রাজ্যের জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের মাধ্যমে সমগ্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতো। সেই পদ্ধতিতেই বাইরের কলেজের পড়ুয়ারা প্রবেশিকা পরীক্ষার মাধ্যমে যোগ দিতেন প্রেসিডেন্সিতে। কিন্তু চলতি বছরে আইনি জটিলতায় বোর্ড সময়মতো প্রক্রিয়া শুরু করতে পারেনি। এতে শত শত পড়ুয়া অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছিলেন। সেই জট কাটাতেই বিশ্ববিদ্যালয় নিজেই দীর্ঘ ১০ বছর পর সেই নিয়ন্ত্রণ নিজের হাত তুলে নিল।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী এ বছর আর কোনো আলাদা প্রবেশিকা পরীক্ষা হচ্ছে না।তার বদলে শিক্ষার্থীদের পূর্ববর্তী ফলাফলের ভিত্তিতে মেধা তালিকা প্রস্তুত করবে অ্যাডমিশন কমিটি। প্রক্রিয়াটি এমনভাবে সাজানো হয়েছে যেখানে ৪০ শতাংশ গুরুত্ব দেওয়া হবে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের নম্বরকে এবং ৬০ শতাংশ আসবে স্নাতকের নম্বর থেকে। ইতিমধ্যেই প্রায় ৬৫০ আসনের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব শিক্ষার্থীরা দখল করেছে ৯০ শতাংশ স্থান। তাই আসল লড়াই হচ্ছে অবশিষ্ট ১০ শতাংশ আসনের জন্য, যা বাইরের প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত। প্রশাসনের লক্ষ্য, ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই পুরো ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করা।
অধ্যাপকমহলের একাংশের মতে, এই উদ্যোগে প্রশাসনিক কার্যকারিতা যেমন বাড়বে, তেমনি পড়ুয়ারাও নির্দিষ্ট ক্যালেন্ডার মেনে তাড়াতাড়ি ক্লাস শুরু করতে পারবে। বোর্ডের বিলম্ব যে আতঙ্ক তৈরি করেছিল, তা অনেকটাই দূর করবে এই সিদ্ধান্ত। তবে প্রেসিডেন্সি ইতিমধ্যেই ইঙ্গিত দিয়েছে, আগামী অর্থবছর থেকে স্নাতক স্তরের ভর্তির দায়িত্বও সম্পূর্ণ নিজেদের হাতে ফিরিয়ে আনতে চায়। পুজোর পরই এ বিষয়ে চূড়ান্ত ঘোষণা আসার সম্ভাবনা প্রবল।
সব মিলিয়ে এটি কেবল ভর্তি প্রক্রিয়ার পরিবর্তন নয়, বরং প্রেসিডেন্সির প্রশাসনিক স্বাধীনতার পথে এক বড় পদক্ষেপ। দীর্ঘদিনের দোলাচল কাটিয়ে এখন প্রতিষ্ঠানটির সামনে সময়মতো সেশন শুরু করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। অবশেষে প্রেসিডেন্সি ফের নিজের পুরোনো ছন্দে ফিরছে।