রেশন কার্ড (Ration Card) হাতে থাকা সত্ত্বেও অনেক পরিবার খাদ্যসাথী প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন—শুধুমাত্র আধার সংক্রান্ত সমস্যার জটিলতায়। কখনও আধার নেই, কখনও বায়োমেট্রিক মিলছে না, আবার অনেকের ই-কেওয়াইসি (e-KYC) প্রক্রিয়া অসম্পূর্ণ থাকায় রেশন কার্ড কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। ফলে রাজ্যের নানা প্রান্তে বহু দুঃস্থ মানুষ নির্ধারিত খাদ্যশস্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এই অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন স্তরে উঠছিল। অবশেষে বিষয়টি সরাসরি খাদ্যদপ্তরের নজরে আসে এবং হস্তক্ষেপে নামলেন খাদ্যসচিব পারভেজ আমেদ সিদ্দিকি।
খাদ্যসাথী পরিকল্পনা রাজ্যের খাদ্য-নিরাপত্তা প্রকল্পের অন্যতম ভিত্তি। প্রায় ৮ কোটি ৯০ লক্ষ মানুষ এই সুবিধার আওতায়। এর মধ্যে আবার ৯৮ শতাংশ গ্রাহকের আধার সংযুক্তিকরণ ও ই-কেওয়াইসি প্রক্রিয়া শেষ হয়ে গিয়েছে। যদিও অবশিষ্ট অল্প কিছু মানুষের ক্ষেত্রে এখনও প্রক্রিয়া অসম্পূর্ণ। অথচ সেই ফাঁকেই সমস্যায় পড়ছে বহু পরিবার। অভিযোগ উঠছে—শুধুমাত্র আধার সংক্রান্ত জটিলতার কারণে অনেক গরিব মানুষ চাল, গম বা অন্যান্য বরাদ্দ খাদ্যশস্য পাচ্ছেন না। ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী থেকে তাঁদের বঞ্চিত হতে হচ্ছে। খাদ্যদপ্তরের নজরে এই বিষয়টি আসায় এবার সরাসরি নির্দেশ পাঠানো হয়েছে জেলা পর্যায়ে।
খাদ্যসচিবের নির্দেশনায় বলা হয়েছে—আধার সংক্রান্ত জটিলতার কারণে বৈধ রেশন গ্রাহককে খাদ্যসাথী প্রকল্প থেকে বিরত রাখা যাবে না। এ বিষয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে তিনি আগামী ৩১ আগস্টের মধ্যে রাজ্যের সমস্ত জেলা শাসকদের রিপোর্ট জমা দেবার নির্দেশ দিয়েছেন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আধার না থাকার কারণে কেউ খাদ্যসাথীর সুবিধা থেকে বাদ পড়েছেন কি না, সে ক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং সমাধান কীভাবে করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, যদি কোথাও দেখা যায় যে কোনও রেশন ডিলার বা দপ্তরের কর্মীর গাফিলতিতে এমন ঘটেছে, তার বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বর্তমানে ই-কেওয়াইসি বাকি থাকায় বহু গ্রাহকের কার্ড ব্লক হয়ে যাচ্ছে আঞ্চলিক দপ্তরের অফিসে। যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে সাধারণ মানুষের জীবনে জানালেন অল ইন্ডিয়া ফেয়ার প্রাইস শপ ডিলার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বম্ভর বসু। আরও জানান, এই সমস্যা যাতে দ্রুত সমাধান হয়, সে ব্যাপারে তাঁরাও বহুদিন ধরে প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়ে আসছিলেন।
খাদ্যসচিবের পাঠানো চিঠিতে পরিষ্কার বলা হয়েছে— রেশন ডিলার থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন ও খাদ্যদপ্তরের কর্মকর্তাদের যৌথ উদ্যোগ ছাড়া এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। এখন দেখার বিষয়, খাদ্যসচিবের এই চিঠির পর জেলায় জেলায় প্রশাসন কতটা উদ্যোগী হন সমস্যার সমাধানে। কারণ কোনও বৈধ ও দরিদ্র রেশন গ্রাহক যাতে আর একদিনও আধারের অজুহাতে খাদ্য থেকে বঞ্চিত না হন।