বাংলা সিনেমার (Bengal Cinema) পরিচিত মুখ, আবার রাজনীতির মাঠেও সক্রিয়—অভিনেতা জয় বন্দ্যোপাধ্যায় আর নেই। সোমবার সকালে দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে বেলা ১১ টা ৩৫ মিনিটে তাঁর জীবনাবসান হয়। বেশ কিছুদিন ধরে স্বাস্থ্য সমস্যা পিছু ছাড়ছিল না। শেষের দিকে ক্রমশ শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও শেষরক্ষা হলো না। চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ চেষ্টা সত্ত্বেও বাঁচানো গেল না ৬২ বছরের এই জনপ্রিয় অভিনেতাকে।
সিনেমায় জয়ের পদচারণা
জয় বন্দ্যোপাধ্যায় জন্ম গ্রহণ করেন ২৩ মে ১৯৬৩ সালে। ছোট থেকেই জয় ছিলেন একজন সিনেমাপ্রেমী। তার অভিনীত বেশিরভাগ ছবি দর্শকের মনে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে। বড়পর্দায় তাঁর প্রথম আবির্ভাব বিদেশ সরকার পরিচালিত ‘অপরূপা’ ছবিতে, যেখানে তার বিপরীতে ছিলেন দেবশ্রী রায়। সেই প্রথম ছবিতে দর্শকের নজর কেড়েছিলেন তিনি।
পরবর্তীকালে নবেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের হাত ধরে ‘চপার’ তাকে এনে দেয় দর্শকের অকুণ্ঠ প্রশংসা। তবে তাঁকে বাণিজ্যিক সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছে দেয় নব্বইয়ের দশকে অঞ্জন চৌধুরীর ‘হীরক জয়ন্তী’। এই চলচিত্রের ফলে সহ-অভিনেত্রী চুমকি চৌধুরীর সঙ্গে তাঁর জুটি দর্শকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রয় হয়ে ওঠে।
হিট ছবির ভাণ্ডার
জয়ের কেরিয়ারে অনেক ছবি রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল অভাগিনী,নাগমোতি, মিলন তিথি– সহ আরও বেশ কিছু। সেসব ছবির মাধ্যমে তিনি গ্রাম্য মানুষ থেকে শহুরে মানুষ পর্যন্ত সবার মন সমানভাবে ছুঁতে পেরেছিলেন। যদিও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনি রূপালি পর্দা থেকে সরে দাঁড়ান এবং নতুনভাবে নিজেকে রাজনীতির ময়দানে প্রতিষ্ঠা করেন।
রাজনীতির পথে
চলচ্চিত্রে থেকে সম্পূর্ণ বিরতি নিয়ে তিনি সক্রিয়ভাবে নাম লেখান রাজনীতিতে। তিনি বিজেপির হয়ে বহুদিন কাজ করেন এবং এমনকি ২০১৪ সালে বীরভূম ও ২০১৯ সালে উলুবেড়িয়ার লোকসভা আসনে প্রার্থী হিসেবেও লড়াই করেন। যদিও দু’বারই খালি হাতে ফিরতে হয়ে তাঁকে। দুবার পরাজয়ের পর শেষমেশ ২০২১ সালে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
অকাল প্রয়াণে শোকের ছায়া
জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে শোক নেমে এসেছে টলিউড থেকে রাজনীতি— সর্বত্র। জয় বন্দ্যোপাধ্যায় সারাজীবন পরিবার, বন্ধুবান্ধব আর অসংখ্য ভক্তদের চোখে থেকে যাবেন এক সুদর্শন নায়ক ও এক অদম্য মানুষ হিসেবে। তাঁর চলে যাওয়া বাংলা চলচ্চিত্র জগতকে নিঃসন্দেহে এক অপূরণীয় ক্ষতির মুখে দাঁড় করালো।