টেলিভিশন সিরিয়ালের দর্শক মানেই শুধু গল্প দেখা নয়, চরিত্রগুলোর সঙ্গে আবেগের গভীর যোগসূত্র তৈরি হয়ে যায়। তারা হাসলে দর্শক খুশি হয়, তারা কাঁদলে কেঁদে ওঠে ঘরের অন্দরের মানুষদের চোখও। তাই যখন বিনোদনের পর্দায় হঠাৎ করেই প্রিয় চরিত্র হারিয়ে যায়, তখন সেই আঘাত অনেকটা পরিবারের কারও জন্য অশ্রু ঝরানোর মতোই হয়ে ওঠে। সম্প্রতি ঠিক এই ঘটনার সাক্ষী হলেন জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘চিরসখা'(Chirasokha)-র অনুরাগীরা।
সিরিয়ালে প্লুটোর আকস্মিক মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না দর্শকরা। ধারাবাহিকের নিয়মিত দর্শকদের মতে, এমন ঘটনা গল্পের আবহকে অতিরিক্ত ভারী করে দেয়। বিশেষ করে বাড়ির অভিভাবকদের একাংশের অভিযোগ, বাস্তব জীবনে প্রতিদিন নানান দুর্যোগ, দুর্ঘটনা বা অকালমৃত্যুর ঘটনা শুনতে হয়, তার ওপর টেলিভিশনেও এ ধরনের দৃশ্য মানসিকভাবে যন্ত্রণা বাড়ায়।
এই প্রশ্ন ওঠার পরেই মুখ খুললেন ধারাবাহিকের লেখিকা লীনা গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর মতে, কাহিনি কোনো এলোমেলো সিদ্ধান্তে তৈরি হয় না। প্রতিটি গল্পের নির্দিষ্ট ছন্দ থাকে, আর পৃথিবীতে যেমন জন্ম আছে তেমনি মৃত্যুও জীবনের অপরিহার্য অংশ। লীনার দাবি, প্লুটোর মৃত্যুর অধ্যায় পূর্বনির্ধারিত ছিল এবং এর মাধ্যমে একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক বার্তা দর্শকদের কাছে পৌঁছে দেওয়াই তাঁর উদ্দেশ্য ছিল।
লেখিকার কথায়, সামাজিক বাস্তবতায় প্রায়শই দেখা যায় বাবা–মায়েরা সন্তানের উপর নিজেদের ইচ্ছা চাপিয়ে দেন—শিক্ষা, পোশাক বা সম্পর্কের ক্ষেত্রেও সন্তানকে একেবারেই স্বাধীনতা দেওয়া হয় না। ফলে অনেক সময়ে এই চাপ অসহনীয় হয়ে উঠে মারাত্মক রূপ নেয়। সাম্প্রতিক এই ট্র্যাক সেই বাস্তবতার প্রতিফলন, যা দর্শকদের সামনে সচেতনতা তৈরির উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হয়েছে।
তবে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন এখন থেকে গেছে —প্লুটো কি সত্যিই আর ফিরে আসবে না? এই বিষয়ে আপাতত নীরব রইলেন লীনা। ফলে দর্শকের মনের অস্থিরতা আরও বেড়েছে। কিন্তু যা স্পষ্ট, তা হল চিরসখা-র সাম্প্রতিক মোড় দর্শকদের মনে গভীর নাড়া দিয়েছে, এবং চরিত্রের মৃত্যু সিরিয়ালপ্রেমীদের মনে দাগ কেটে গেছে।