দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটল। টানা বারো বছরের আইনি টানাপোড়েন শেষে অবশেষে তিনটি মামলায় স্বস্তির রায় পেলেন সারদা চিটফান্ড (Saradha Chit Fund) কাণ্ডের মূল দুই চরিত্র— সুদীপ্ত সেন এবং দেবযানী মুখোপাধ্যায়।আজ, মঙ্গলবার কলকাতার ব্যাঙ্কশাল আদালত জানায়, হেয়ার স্ট্রিট থানার মাধ্যমে দায়ের হওয়া তিনটি মামলায় তাঁদের অপরাধ প্রমাণিত করা সম্ভব হয়নি। ফলে এই দু’জনকে বেকসুর খালাস ঘোষণা করা হয়েছে।
আদালতের বক্তব্য
মামলাটির গুরুত্ব ছিল যথেষ্ট বেশি, কারণ এই কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার পর হাজার হাজার আমানতকারী তাদের সঞ্চিত অর্থ হারিয়েছিলেন। তবে এদিন আদালত পরিষ্কার জানায়, পুলিশ পক্ষ মজবুত প্রমাণ পেশ করতে ব্যর্থ হয়েছে। যদিও পঞ্চাশ জন সাক্ষীকে হাজির করার কথা ছিল, বাস্তবে মাত্র পনেরো জন আদালতে হাজির হন। তাঁদের সাক্ষ্য থেকেও প্রতারণা বা আর্থিক জালিয়াতির অভিযোগকে সমর্থন করার মতো কিছু মেলে না বলেই মন্তব্য করে বিচারক।
আপাতত জেল থেকে মুক্তি নয়
এই রায় ঘোষণার পর সুদীপ্ত এবং দেবযানী স্বস্তি পেলেও এখনই মুক্তি পাচ্ছেন না কেউই। রাজ্যে তাঁদের বিরুদ্ধে রয়েছে প্রায় আড়াইশো মামলা। এর বেশিরভাগে তাঁরা জামিন পেলেও এখনও কয়েকটি মামলায় জামিন মেলেনি। উপরন্তু সিবিআই ও ইডি আলাদাভাবে তদন্ত চালাচ্ছে, যার ফলে তাঁদের জেল জীবন অব্যাহত থাকবে। বর্তমানে সুদীপ্ত রয়েছেন প্রেসিডেন্সি জেলে আর দেবযানী বন্দি আছেন দমদম সেন্ট্রালে।
অতীতের ঝলক
২০১৩ সালে যখন সারদার প্রতারণা চক্র প্রকাশ্যে আসে, তখন সুদীপ্ত সেন দেবযানীকে নিয়ে কাশ্মীরে গা ঢাকা দেন। তবে বেশিদিনতো লুকিয়ে থাকা যায় না। সেই বছরই ২৩ এপ্রিল তাঁদের গ্রেফতার করে আনা হয়। পরবর্তী সময়ে একাধিকবার তাঁদের যৌথভাবে জেরা করা হয়। বরং সুদীপ্ত সেন নিজেই অভিযোগ তোলেন যে দেবযানীর চাপে তিনি টাকা দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। এই অভিযোগ ঘিরেই তদন্ত আরও গতি পায়।
পরবর্তী পদক্ষেপ
আজকের রায় নিঃসন্দেহে দুই অভিযুক্তের আইনগত লড়াইকে স্বস্তি দিয়েছে। তবে মামলার জটিলতা এখনও শেষ হয়নি। সামনে রয়েছে শতাধিক মামলা, কেন্দ্রীয় সংস্থার আলাদা অভিযুক্ত করা, আর বিচার ব্যবস্থা। ফলে সারদা কাণ্ড এখনও শেষ নয়, বরং নতুন দিকের অপেক্ষায় রয়েছে গোটা রাজ্য।