টলিউডের (Tollywood) পর্দায় তাঁর হাসি, তাঁর অভিব্যক্তি, তাঁর উপস্থিতি স্মৃতি থেকে মুছে ফেলা যায় না। শুধু নায়িকা হিসেবেই নয়, প্রজন্মের পর প্রজন্ম দর্শক তাঁকে ভরসা করে বড় পর্দায় দেখেছে। কিন্তু বিশ্বাস করবেন? যিনি পরবর্তী সময়ে বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম উজ্জ্বল মুখ হয়ে ওঠেন, তাঁর প্রথম আয় এসেছিল স্রেফ একটি গরম সিঙ্গারা, সঙ্গে জিলিপি আর পাঁচটা টাকা!
কথাটা শুনতে গল্পকথার মতো লাগলেও ঘটনাটি সত্যি। সেই দাপটে নায়িকা হলেন “সন্ধ্যা রায় “। শুরুটা হয়েছিল ছোট্ট এক ঘটনায়। ‘মামলার ফল’ ছবির শুটিং চলাকালীন, ভিড় প্রয়োজন ছিল একটি দৃশ্যে। কিশোরী সন্ধ্যা অন্যদের সঙ্গে মিশে গিয়ে বসে পড়েন সেই ভিড়ে। তখন পরিচালকের চোখ পড়তেই তাঁকে ডেকে বলেন “একটা সংলাপ বলতে পারবে?”, নায়িকার কোলের শিশুকে দিয়ে বলতে হবে, “এই নাও তোমার সতীনপো।” সংলাপ সহজ, কিন্তু সাহসী উচ্চারণেই তিনি সকলকে চমকে দেন। সেই সংলাপই হয়ে দাঁড়ায় তাঁর প্রথম অভিনয়ের অভিজ্ঞতা। সেদিনের তার প্রথম পারিশ্রমিক ছিল একটি গরম সিঙ্গারা, সঙ্গে জিলিপি আর পাঁচ টাকা নগদ।
সেখান থেকেই শুরু। তারপরের কয়েক দশক জুড়ে ৪৫০টিরও বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি—বাংলা তো বটেই, হিন্দি ছবিতেও তাঁর স্বাক্ষর রয়েছে। সহজ অভিনয়ের ভঙ্গি, নিষ্ঠা এবং প্রাকৃতিক অভিব্যক্তি তাঁকে দর্শকদের কাছে ঘরের মেয়ের মতোই করে তুলেছিল। পরিচালক রাজেন তরফদারের হাত ধরেই ছোট্ট সন্ধ্যা পেলেন প্রথম বড় সুযোগ। তাঁর চেহারার নিষ্পাপ সৌন্দর্য তাঁকে উপযুক্ত করে তোলে ‘অন্তরীক্ষ’ ছবির জন্য। মাত্র বারো বছর বয়সে নায়িকা হিসেবে পর্দায় আসেন তিনি, আর প্রথম ছবিটিই ঝড় তোলে বক্স অফিসে।
পরিচালক রাজেন তরফদারের সান্নিধ্যে শুরু হওয়া সেই পথচলা পরে তাঁকে নিয়ে যায় পরিচালক তরুণ মজুমদারের কাছেও। সন্ধ্যা রায় বারবার বলেছেন, তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় আশ্রয় ছিলেন পরিচালক রাজেন তরফদার। শিশুকালেই অভিভাবকের স্নেহ হারানো এই অভিনেত্রীর মাথার উপর রাজেনবাবুরই ছিলেন একমাত্র। আজ যখন টলিউডের অনেকেই রাজেন তরফদারের কথা ভুলে গিয়েছেন, তখনও সন্ধ্যা রায় অকৃতজ্ঞ হননি—প্রতিটি সাক্ষাৎকারে তিনি তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে ভোলেন না।
এক সময়ের সেই “পাঁচ টাকার অভিনেত্রী” পরবর্তীতে পরিণত হয়েছেন বাংলার সোনালি চলচিত্রের প্রতীক হিসাবে। তাঁর যাত্রাপথ প্রমাণ করে দেয়, প্রতিভা ও ভাগ্য মিলে গেলে সাধারণ শুরুও একদিন কিংবদন্তির জন্ম দিতে পারে।