শরতের শুরুতেই বীরভূমের (Birbhum) তারাপীঠের রাস্তাঘাট যেন উৎসবের প্রস্তুতির শব্দে মুখর। মন্দির প্রাঙ্গণ থেকে শুরু করে আশপাশের লজ–হোটেল কিংবা দোকানপাট—সবাই প্রস্তুত হচ্ছে বছরের সবচেয়ে বড় ভিড় সামলাতে। কারণ আর কিছু দিন পরেই আসছে সেই বিশেষ দিন ‘কৌশিকী অমাবস্যা’। প্রতি বছরই মা তারার দরবারে লাখো মানুষ ভিড় করেন এই বিশেষ তিথিতে, আর এবার সেই ভিড় আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে বলেই অনুমান করছে প্রশাসন।
এবারের কৌশিকী অমাবস্যা শুরু হবে শুক্রবার সকাল ঠিক ১১টা ৫৫ মিনিটে এবং চলবে শনিবার সকাল ১১টা ২২ মিনিট পর্যন্ত। কৌশিকী অমাবস্যার পরের দিন রবিবার থাকার ফলে তিন দিনের এই ধারাবাহিক ছুটিকে ঘিরে ভিড় হবে অতীতের সব রেকর্ড ছাপানো। সরকারিভাবে অনুমানে এবার পাঁচ লক্ষাধিক ভক্ত মা তারার দর্শনে আসতে পারেন। এর আগের দুই বছরেই দেখা গিয়েছে, আড়াই থেকে চার লক্ষ মানুষ ট্রেনের উপর ভর করে তারাপীঠে পৌঁছেছিলেন। ফলে শুধু ধর্মীয় আবহ নয়, বড়সড় অর্থনৈতিক দিক থেকেও এই উৎসব যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। ওই সময় রেলের আয়ও হয়ে ছিল মোটা অঙ্কের। তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, শুধুমাত্র হাওড়া থেকে একটি স্পেশাল ট্রেনই কি এত ভিড় সামলাতে যথেষ্ট?
তারাপীঠ মন্দির কমিটির মতে, উত্তরবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড ও বিহার থেকেও বিপুল পরিমাণ মানুষ আসেন। তাদের পরিসংখ্যান বলছে, মোট দর্শনার্থীর মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ এই দুই রাজ্য থেকে এবং আরও প্রায় ২০ শতাংশ উত্তরবঙ্গ ও অসম থেকে ট্রেনে উঠেন। সেক্ষেত্রে কেবল হাওড়া নয়, শিয়ালদহ, দেওঘর, এমনকি শিলিগুড়ি থেকেও স্পেশাল ট্রেনের প্রয়োজন রয়েছে। কমিটির সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যায় স্পষ্টই জানিয়েছেন, ভিড় সামলাতে একাধিক রুট থেকে ট্রেন না চালালে তীব্র সমস্যার সৃষ্টি হবে। ইতিমধ্যেই সেই প্রস্তাব জানানো হয়েছে রেলকে। সাংসদ শতাব্দী রায়ও চিঠি দিয়ে একাধিক স্পেশাল ট্রেন চালানোর দাবি জানিয়েছেন হাওড়ার ডিআরএম-এর কাছে।
শুধু মন্দির কমিটি নয়, এলাকার লজ ও হোটেল মালিকদেরও মাথায় হাত। বুকিং অনেক আগেই শেষ! এখন তাঁরা একদিকে খুশি—কারণ ভিড় মানে ব্যবসার সুযোগ—আবার চিন্তিতও, কারণ যদি পর্যাপ্ত ট্রেন না থাকে তা হলে ভিড় সামলানো মুশকিল।
তবে পূর্ব রেলের তরফে মুখপাত্র দীপ্তিময় দত্ত জানালেন, শেষ সিদ্ধান্ত নেবেন ডিআরএম। আপাতত জল্পনা বাড়ছে—কৌশিকী অমাবস্যার এই অভূতপূর্ব ভিড় সামলাতে রেল কতটা এগিয়ে আসে, আর তারাপীঠগামী ভক্তদের জন্য আসলেই বাড়তি ট্রেন চলাচল শুরু হয় কি না।