কলকাতার (Kolkata) রাজনৈতিক আবহ আবারও তপ্ত হতে চলেছে। এবারে কেন্দ্রীয় রেলের এক বড় মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপস্থিতিই তৈরি করেছে চর্চা। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতে দমদম থেকে তিনটি নতুন মেট্রো রুটের উদ্বোধন হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানানো হলেও, তাতে সাড়া দিচ্ছেন না তিনি। সূত্র বলছে, নিছক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নয়—বাংলার প্রতি ‘অবিচার’ ও ‘অপমান’সহ একগুচ্ছ কারণই তাঁর এই পদক্ষেপের পেছনে রয়েছে।
জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের নানা প্রান্তে বাংলাভাষী মানুষকে ঘিরে বৈষম্যের অভিযোগে ক্রমশ সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য, কেন্দ্রীয় শাসক দলের প্রশ্রয়ে চলছে ভাষাভিত্তিক হেনস্তা ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন। বাংলার মানুষকে ‘অনুপ্রবেশকারী’ বলে চিহ্নিত করে হেয় করা হচ্ছে, যা তিনি বাংলার অসম্মান বলে মনে করেন। এমন পরিস্থিতিতে মঞ্চ ভাগ করে নেওয়া তাঁর কাছে আপত্তিকর বলে মনে হয়েছে বলেই এই পদক্ষেপ।
তবে এটিই একমাত্র কারণ নয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রেলমন্ত্রী থাকার সময় যেসব প্রকল্প তিনি পরিকল্পনা করেছিলেন, অর্থ বরাদ্দ করেছিলেন, সেগুলিই দীর্ঘ দেরির পর ভোটের আগে উদ্বোধন করছে কেন্দ্র। এত দিনের গাফিলতি ঢাকতে এখন প্রচারের আলো কুড়োতে চাইছে বিজেপি, আর তাই ‘রুটিন ইনভিটেশন’ মেনে মঞ্চে যোগ দিতে নারাজ মুখ্যমন্ত্রী।
অতীতে কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠানে উপস্থিত হলেও, মমতা অভিযোগ করেছেন, বিজেপি সমর্থকরা বারবার সরকারি মঞ্চকে রাজনৈতিক অশোভন আচরণের জায়গায় পরিণত করেছে। তাই এবার তিনি এমন কোনো সুযোগ দিতে রাজি নন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই সিদ্ধান্তে আসন্ন নির্বাচনের প্রেক্ষিতে স্পষ্ট বার্তা রয়েছে। বাংলাকে বঞ্চিত করার অভিযোগে এবং ভাষাভিত্তিক বৈষম্যের প্রতিবাদে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর দলকে আরও সরব করতে চাইছেন। তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীরা ইতিমধ্যেই প্রচারে নেমেছে, যেখানে তুলে ধরা হচ্ছে মমতার রেলমন্ত্রী থাকাকালীন বাংলাতে বাস্তবায়িত প্রকল্পগুলির বিস্তৃত পরিসর। পাহাড় থেকে সমুদ্রতীর, মফস্বল থেকে মহানগর—নতুন রেললাইন, স্টেশন, কর্মসংস্থান—সবই তাঁর কৃতিত্বের খতিয়ান হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে।
ফলে নিশ্চিত, ২২ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী কলকাতায় এলে উদ্বোধনী পদক্ষেপ যতটা আলোচনায় থাকবে, ততটাই গুরুত্ব পাবে মুখ্যমন্ত্রীর অনুপস্থিতি। বাংলার মেট্রো রেলের নতুন রুটের সূচনা যদি হয় উন্নয়নের উদ্যাপন, তবে তার মাঝেই আসন্ন নির্বাচনের আগে এই রাজনৈতিক টানাপোড়েন আরও তীব্র হতে চলেছে তা বলাই যায়।