উত্তরবঙ্গের (North Bengal) পাহাড় মানে সাধারণত আমাদের চোখে ভেসে ওঠে দার্জিলিং, কালিম্পং বা কার্শিয়াং। ট্রেন থেকে নামার পর পর্যটকদের ঢল আর ভিড় জমা চা-বাগান যেন এই কেন্দ্রগুলির অবিচ্ছেদ্য চিত্র। কিন্তু খুব কম মানুষ জানেন, এই ভিড়ভাট্টার বাইরে রয়েছে এমন কিছু গ্রাম, যেগুলি এখনো শহুরে কোলাহল থেকে দূরে, অচেনাই থেকে গেছে। এরকমই এক পাহাড়ি গ্রাম হলো চিসাং, যা ধীরে ধীরে অফবিট ডেস্টিনেশন হিসেবে ভ্রমণপিপাসুদের স্বপ্নের তালিকায় জায়গা করে নিচ্ছে।
চিসাং অবস্থিত ভারত-ভুটান সীমান্ত অঞ্চলে। পাহাড়ি ঢালে গড়ে ওঠা ছোট্ট এই জনপদে ঘরবাড়ির সংখ্যা কম হলেও সৌন্দর্যের মাত্রা অসীম। চারপাশে সবুজ বন, ছোট ছোট ক্ষেত আর রঙিন ফুলের সারি—প্রথম নজরেই মনে হবে যেন হাতের সামনে রঙতুলির ক্যানভাস মেলে ধরা হয়েছে। গ্রামের প্রধান চাষ এলাচ, তাই হালকা বাতাসে সারাক্ষণ ভেসে আসে মিষ্টি গন্ধ। ভোর বেলা ঘুম ভাঙে পাখির ডাক আর সন্ধ্যার পর পাহাড়ি নীরবতাই হয়ে ওঠে গ্রামের পরিচিত সঙ্গীত।
বর্ষাকালে চিসাং-এর রূপ আরও অন্যরকম। কখন মেঘের সাদা চাদরে ঢেকে যায় পাহাড়, কখনো আবার সূর্যের আলো ভেঙে পড়ে উপত্যকা জুড়ে। এই বৈচিত্র্যময় পরিবেশের জন্যই প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটকদের কাছে গ্রামটিকে আলাদা করে তুলেছে।
এখানকার মানুষের আন্তরিকতা আর গ্রামীণ আতিথেয়তা দর্শনার্থীদের মনে ছাপ ফেলে। পাহাড়ের নিরিবিলি পরিবেশ আর সাদামাটা হোমস্টেতে রাত কাটানোর মজা, শহুরে জীবন থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। তাই যারা ভিড় থেকে পালিয়ে প্রকৃতির সান্নিধ্যে সময় কাটাতে চান, তাঁদের কাছে এটাই বড় আকর্ষণ।
ঘোরার বিকল্পও কম নয়। পায়ে হেঁটে বা গাড়ি ভাড়া করে কাছের দাওয়াইপানি, তোদে বাজার, সীমানাখোলা ঘুরে আসা যায়। আবার চাইলে একটু সময় নিয়ে চলে যেতে পারেন ঝালং, বিন্দু কিংবা পারেনো পর্যন্ত। চিসাং পৌঁছনোর সেরা উপায় নিউ মাল জংশন স্টেশন থেকে গাড়ি ভাড়া করে ওঠা। রাস্তায় চলতে চলতে চারপাশে যে দৃশ্য উপভোগ করবেন, সেটাই ভ্রমণের অর্ধেক আনন্দ দিয়ে দেবে।
চিসাং এমনই এক জায়গা, যেখানে ভিড় নেই, নেই বাহারি উন্মাদনা। আছে শুধু প্রকৃতির সান্নিধ্য, শান্তি আর হারিয়ে যাওয়ার মজা। যারা জঙ্গল আর পাহাড়ের আদরে কয়েকটা দিন নিরিবিলিতে কাটাতে চান, তাঁদের জন্য উত্তরবঙ্গের এই অচেনা গ্রাম নিঃসন্দেহে এক নতুন ঠিকানা।