ভাবুন তো, দামি দামি রেস্টুরেন্ট খাওয়া, ঘুরতে যাওয়া বা অনলাইন শপিংয়ের মতো খরচের সামান্য অংশ বাঁচিয়ে যদি ভবিষ্যতে হাতে এসে পড়ে কোটি টাকার অঙ্ক—কেমন লাগবে? হ্যাঁ, শুনতে অবিশ্বাস্য শোনালেও সরকারি এক পরিকল্পনা সেই সুযোগ দিচ্ছে। কর্মচারী ভবিষ্যৎ নিধি বা ইপিএফ (EPF) এমনই এক স্কিম, যেখানে ছোট্ট মাসিক সঞ্চয় দীর্ঘ সময়ে গড়ে তোলে পাহাড়সম তহবিল।
EPF আসলে কী সুবিধা দেয়?
ইপিএফ আসলে কর্মজীবী মানুষের অবসরকালীন সঞ্চয়ভাণ্ডার। চাকরিজীবী যে বেতন পান তার নির্দিষ্ট অংশ সরাসরি জমা পড়ে তাঁর ইপিএফ অ্যাকাউন্টে। শুধু কর্মী নন, তার নিয়োগকর্তাও টাকা জমান। ফলে প্রতি মাসে দু’জনের অবদান মিলে তৈরি হয় নিশ্চিত সঞ্চয়। এর এক ভাগ যায় পেনশনে, বাকিটা ইপিএফে জমে সুদসহ বাড়তে থাকে। বাজারের ওঠানামার প্রভাব এখানে একেবারেই নেই—আর এটাই এর বড় শক্তি।
কীভাবে কোটি টাকা জমতে পারে?
একটা উদাহরণ নিন। ধরা যাক, আপনার বেসিক স্যালারি প্রায় ৩২ হাজার টাকার মতো। এতে আপনি নিজে প্রায় ৩,৮০০ টাকা দেবেন, আর নিয়োগকর্তা প্রায় ১,২০০ টাকা যোগ করবেন। মাসে ধরে নিন মোটে ৫,০০০ টাকা জমল।
এবার যদি ২৫ বছর বয়সে চাকরি শুরু করেন এবং ৫৮ বছর অবধি টানা এই সঞ্চয় চালিয়ে যান, তার সঙ্গে মিলে যাবে বেতন বৃদ্ধির প্রভাব ও সরকারের নির্ধারিত সুদ (বর্তমানে প্রায় ৮.৫%)। দীর্ঘ সময়ে এই গাণিতিক হিসেব গিয়ে দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকায়! অথচ নিজের পকেট থেকে আসলে দিয়েছে প্রায় ১.৩৩ কোটি—বাকিটা কেবল সুদের জাদু।
শুধু এককালীন টাকাই নয়, পাবেন মাসিক ইনকামও
ইপিএফ মানেই শুধু অবসরে মস্ত অঙ্ক হাতে পাওয়া নয়। এর সঙ্গে যুক্ত থাকে ইপিএস নামের পেনশন সুবিধা। এখন ন্যূনতম পেনশন যেখানে ১,০০০ টাকা। মানে অবসরের পরেও মাসে মাসে আয়ের নিশ্চয়তা।
তবে জানা যাচ্ছে, এক ধাক্কায় পেনশন ১০০০ থেকে ৭,০০০ টাকার কাছাকাছি করা হতে পারে। অর্থাৎ অবসরের পরে এককালীন তহবিল ছাড়াও মাসে মাসে নিয়মিত টাকা হাতে আসবে। তাই নিছক সঞ্চয় নয়, এটি আসলে “অবসরের পর নিয়মিত আয়ের সঙ্গে নিরাপত্তা” দুইয়েরই গ্যারান্টি।
এতটাই নিরাপদ কেন এই প্রকল্প?
শেয়ারবাজারের ওঠাপড়ায় যেখানে মূলধন হারানোর ঝুঁকি থাকে, ইপিএফ সেখানে সম্পূর্ণ ঝুঁকিমুক্ত। সরকারের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এই স্কিমে আপনি বাকি জীবনের জন্য আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেন। এ কারণেই বহু কর্মী চাকরির শুরু থেকেই ইপিএফকে ভরসার জায়গা হিসেবে বেছে নেন।